বিপ্লব সিকদার :
সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখার অন্যতম প্রধান উপকরণ হলো আইন। এটি শুধু রাষ্ট্র পরিচালনার নিয়ম নয়, বরং মানুষের জীবনযাত্রাকে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ ও সম্মানজনক করার একটি সর্বজনীন কাঠামো। কিন্তু আমরা আজ এমন এক সমাজে বাস করছি, যেখানে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থরক্ষার জন্য অনেকেই আইনবহির্ভূত পথ বেছে নিচ্ছেন। তাৎক্ষণিক সুবিধার আশায় এই পথ বেছে নিলেও দীর্ঘমেয়াদে এর ফলাফল হয় ভয়াবহ।
বেআইনি পথের বিপদ
অবৈধ পথে স্বার্থ আদায় মানেই নিয়মের প্রতি অবজ্ঞা। ঘুষ, সুপারিশ, প্রভাব খাটিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়া, কিংবা মামলার ভয় দেখিয়ে কাউকে চাপের মধ্যে ফেলা—এসবই বেআইনি সংস্কৃতির অংশ। এতে সমাজে দুর্নীতি ও বৈষম্য বাড়ে। সাধারণ মানুষ আইনের ওপর আস্থা হারায়। ন্যায়বিচার তখন শুধু কিছু ক্ষমতাবান মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে।
আইনি পথের গুরুত্ব
প্রকৃত সমাধান সবসময়ই আসে নিয়মিত ও ন্যায্য পথ অবলম্বনের মাধ্যমে। আদালতের দরজা খোলা আছে সবার জন্য। কোনো অধিকার ক্ষুণ্ন হলে, জমি নিয়ে বিরোধ হলে, বা কারও বিরুদ্ধে অন্যায় হলে—আইন রয়েছে তা সমাধানের জন্য। প্রশাসনিক কাঠামো, সালিশ ব্যবস্থা ও বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির (Alternative Dispute Resolution – ADR) মতো ব্যবস্থাগুলো আইন অনুযায়ী চললে তা হয় দ্রুত, নিরপেক্ষ ও টেকসই।
আইনের প্রতি অনাস্থা কেন?
একটি বড় সমস্যা হলো—আইনি প্রক্রিয়া জটিল ও দীর্ঘ মনে হওয়া। অনেকে মনে করেন, আদালতে গেলে হয়রানি হতে হবে, প্রভাবশালীরা পার পেয়ে যাবে। আবার অনেকেই আইনের প্রকৃত পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। এই অজ্ঞতা ও ভীতি থেকেই shortcut-এর প্রতি মানুষের দুর্বলতা তৈরি হয়। ফলে সমাধানের চেয়ে সমস্যা আরও জটিল হয়।
আমাদের করণীয়
আমাদের উচিত সচেতন নাগরিক হিসেবে আইনকে শ্রদ্ধা করা এবং আইনসঙ্গত পথে সমাধান খোঁজা। কোনো সমস্যায় পড়লে বা অন্যায় দেখলে উচিত আইনি সহায়তা নেওয়া। প্রশাসনের সহযোগিতা চাওয়া, প্রামাণ্য তথ্য জমা দেওয়া, মামলা করা—এসবই একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্ব। ভুল পথে না গিয়ে আমরা যদি সঠিক পন্থা অনুসরণ করি, তবে সমাজে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত হবে।ব্যক্তিগত হোক বা প্রাতিষ্ঠানিক, যে কোনো স্বার্থরক্ষায় আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত আইন মেনে চলা। আইনবহির্ভূত পথ শুধু সমাজকে অস্থির করে তোলে না, বরং নৈতিক অবক্ষয়েরও কারণ হয়। তাই আসুন, আইনকে পাশ কাটিয়ে নয়—আইনের মধ্য দিয়েই সমস্যা সমাধানের সংস্কৃতি গড়ে তুলি। তবেই আমরা পারবো একটি সুশাসিত, শান্তিপূর্ণ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ উপহার দিতে আমাদের আগামী প্রজন্মকে। লেখক – সাংবাদিক