মেঘনা উপজেলায় দিন দিন সংকুচিত হয়ে পড়ছে জনগণের প্রাকৃতিক ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ—খাস জমি, হালট, খাল ও জলাশয়। এই জনপদের প্রাণপ্রবাহ ছিল যেসব খাল ও সরকারি জমি, তা আজ অবৈধ দখলে। প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় এসব ভূমি দখল করে গড়ে তোলা হচ্ছে দোকান, দালান, বসতঘর। প্রশাসনের অভিযান হয়তো মাঝেমধ্যে চলে, কিন্তু তা যেন দায়সারা। স্থায়ী সমাধান কোথায়?
সরকারি সম্পদ দখলের প্রতিটি ঘটনা শুধুমাত্র ভূমি দখলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়—তা পরিবেশ ধ্বংস, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি, কৃষিজমি হ্রাস এবং সামাজিক বৈষম্যের বহিঃপ্রকাশও বটে। এসব জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনের নিরুত্তাপ অবস্থান জনমনে প্রশ্ন তোলে: কেন দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়া হচ্ছে না? কোথায় আইনের শাসন?
আরও ভয়াবহ বাস্তবতা হলো, এসব অপরাধের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে চায় না। অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পরেও সাক্ষী দেয় না, প্রতিবাদ করে না, চুপ করে থাকে। এটি নিছক নীরবতা নয়, এটি এক ধরনের সামাজিক আতঙ্ক ও প্রশাসনিক অনাস্থার ফল। বহু মানুষ মনে করে, প্রতিবাদ করলে উল্টো হয়রানির শিকার হতে হবে। স্থানীয় থানায় কিংবা আদালতে গিয়ে সাক্ষ্য দিলেও বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ—এমন একটি ধারণা যেন সমাজে গেঁথে গেছে।
এভাবে চলতে থাকলে শুধু মেঘনা নয়, সমগ্র দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী আরও বিপন্ন হয়ে পড়বে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ব্যক্তি দখলে গেলে, রাষ্ট্রের কর্তৃত্ব ক্ষয় হয়। আইনের প্রয়োগ না হলে, মানুষের আস্থা ভাঙে।
তাই এখনই সময়, মেঘনায় প্রশাসনকে রাজনৈতিক ও প্রভাবশালী শক্তির উর্ধ্বে উঠে ভূমি উদ্ধারে সক্রিয় হতে হবে। খাস জমি ও খালচুরি প্রতিরোধে চাই পর্যবেক্ষণ, জনগণের অংশগ্রহণ এবং আইনি সুরক্ষা। সাধারণ মানুষের সাহস ফিরিয়ে দিতে হবে—সাক্ষী সুরক্ষা, স্থানীয় হেল্পলাইন, ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে।
মেঘনার জনগণ প্রশ্ন করছে—কেন আমরা চুপ থাকি? কেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে ভয় পাই? এই প্রশ্নের জবাব প্রশাসনকেই দিতে হবে, এখনই।