সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ নয়। এটি একটি রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, যা গণতন্ত্রকে প্রাণবন্ত রাখে, প্রশাসনের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে, দুর্নীতির মুখোশ উন্মোচন করে। কিন্তু মেঘনায় আজ সাংবাদিক পরিচয় যেন এক অভিশাপ! সত্য প্রকাশ করলেই শুরু হয় হুমকি, শুরু হয় রাজনৈতিক চক্রান্ত, শুরু হয় সামাজিকভাবে একঘরে করে দেওয়ার চেষ্টা।
আজ মেঘনায় যাঁরা এলাকার নানা অনিয়ম—স্কুলে ঘুষ নেওয়া, খাসজমি দখল, রাজনৈতিক অপব্যবহার—এসব নিয়ে লিখছেন, তাঁরা কেউই নিরাপদ নন। কখনো স্থানীয় ‘প্রভাবশালীরা’ ফোন করে হুমকি দেয়, কখনো মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির ফাঁদ পাতা হয়। প্রশাসনের কিছু অংশ এ ক্ষেত্রে নীরব দর্শক—বা আরও খারাপভাবে বললে, অংশীদার।
সাংবাদিক মানেই শত্রু?
একজন সাংবাদিক যখন প্রশ্ন তোলে—“উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ৫ মাস ধরে নেই, কেন?” তখন সে হয় ‘বিরোধী পক্ষের লোক’।
যখন সে লিখে—“প্রশংসাপত্র নিতে কেন টাকা?” তখন তার বিরুদ্ধে ওঠে চরিত্র হননের চেষ্টা।
যখন সে তথ্য চায়—“এই খালটি কার নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে?” তখন তাকে বলা হয়, “তোমার অনেক জানার দরকার নেই।”
এটা কেবল একটি সাংবাদিকের নয়—সার্বিকভাবে জনগণের বাকস্বাধীনতার ওপর আঘাত।
প্রশাসনের ভূমিকায় প্রশ্ন
সাংবাদিকরা প্রশাসনের প্রতিপক্ষ নয়, বরং সহযোগী। কিন্তু যখন প্রশাসনের কোনো অংশ রাজনৈতিক প্রভাবের সামনে নতজানু হয়ে পড়ে, তখন সত্য প্রকাশ করাই হয়ে যায় অপরাধ। তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ তো দূরের কথা, অনেক ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের সাথে তুচ্ছ আচরণ করা হয়। কখনো কোনো অফিসে গেলে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করিয়ে রাখা হয়, কখনো ‘উচ্চপদস্থ’ নির্দেশ ছাড়া তথ্য দেওয়া হয় না।
এই ভীতি, এই ঘেরাটোপ—গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত।
আমরা কেমন মেঘনা চাই?
একটি সচেতন সমাজের প্রতিচ্ছবি তখনই প্রকাশ পায়, যখন সেখানে সাংবাদিকরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেন। তাদের কলম নিপীড়িতের পক্ষে কথা বলে, দুর্নীতির বিরুদ্ধেও। তাই একজন সাংবাদিক নিপীড়িত হওয়া মানে পুরো সমাজের তথ্যের অধিকার খর্ব হওয়া।
আমরা চাই—
মেঘনায় সাংবাদিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক
হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হোক
প্রশাসন তথ্যদানে সহযোগিতার মনোভাব গ্রহণ করুক
রাজনৈতিক নেতারা সাংবাদিকদের শত্রু নয়, গণতন্ত্রের সহযোদ্ধা হিসেবে দেখুক
মেঘনায় সাংবাদিকদের উপর নিপীড়ন বন্ধ না হলে শুধু একটি পেশা নয়, পুরো সমাজই অন্ধকারে নিমজ্জিত হবে। যারা আজ লিখছে, প্রশ্ন তুলছে, সাহস দেখাচ্ছে—তারা নিঃশব্দ হয়ে গেলে আপনি-আমি কেউই জানবো না আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হচ্ছে কীভাবে।
তাই এখনই সময়—সাংবাদিকদের পাশে দাঁড়ানোর,
তাদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার,
এবং সাহসী সত্যকেই সমাজের শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার।