তৃণমূলের নেতৃত্বে স্থবিরতা: গণতন্ত্র ও নতুন নেতৃত্ব তৈরির সংকট

বিপ্লব সিকদার।। 

রাজনৈতিক দলের প্রাণশক্তি নিহিত থাকে তৃণমূল পর্যায়ে। কারণ এখান থেকেই গড়ে ওঠে প্রকৃত কর্মী, ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং দলের প্রতি অটল আনুগত্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে প্রায়শই দেখা যায়, তৃণমূলেই কোনো ব্যক্তি একটানা ২০–২৫ বছর ধরে একই পদে আসীন থাকেন। এই প্রথা শুধু অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করে না, বরং নতুন নেতৃত্ব তৈরির পথকেও রুদ্ধ করে দেয়।প্রথমত, একই পদে দীর্ঘসময় থাকা মানেই অভ্যন্তরীণ নির্বাচন বা প্রতিযোগিতা স্থগিত হয়ে যাওয়া। ফলে গোষ্ঠীভিত্তিক আনুগত্য প্রাধান্য পায়, যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা গুরুত্ব হারায়। রাজনৈতিক দল ব্যক্তিনির্ভর হয়ে পড়ে, যা দলের গণতান্ত্রিক চরিত্রের সাথে সাংঘর্ষিক।দ্বিতীয়ত, তরুণ কর্মী কিংবা ত্যাগী নেতৃত্ব যখন দেখতে পান তাদের জন্য কোনো সুযোগ নেই, তখন তারা হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ান। এতে করে দলের কর্মীবাহিনীর ভেতর উদ্যম ও প্রাণশক্তি হারিয়ে যায়। যে কর্মীরা একসময় আন্দোলনে, সংগ্রামে, সংগঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন, তারাই ধীরে ধীরে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েন।তৃতীয়ত, নেতৃত্বের স্থবিরতা নতুন প্রজন্মের বিকাশ রোধ করে। একজন নেতা যতই অভিজ্ঞ হোন না কেন, নতুন সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তরুণ নেতৃত্বের প্রয়োজন অপরিহার্য। কিন্তু পদে পরিবর্তনের সংস্কৃতি না থাকায় নতুনদের বিকাশের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।অতএব, রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত পদে সময়সীমা নির্ধারণ করা, যাতে নির্দিষ্ট সময় পর নেতৃত্বে পরিবর্তন আসে।তৃণমূল থেকে নিয়মিত গোপন ব্যালটে নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে প্রকৃত প্রতিযোগিতা তৈরি হয়।তরুণ ও নতুন নেতৃত্বকে অগ্রাধিকার দেওয়া, প্রশিক্ষণ ও সুযোগ সৃষ্টি করা।রাজনৈতিক দলের ভেতরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত না হলে জাতীয় রাজনীতিতেও গণতন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। তাই নেতৃত্বের একচ্ছত্র আধিপত্য নয়, বরং নিয়মিত পরিবর্তন, প্রতিযোগিতা ও নতুন নেতৃত্ব তৈরিই দলের প্রাণশক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদি অস্তিত্বের নিশ্চয়তা।

– সাংবাদিক ও রাজনৈতিক।