September 3, 2025, 4:08 am

শিক্ষার আলো নিভিয়ে দিচ্ছে পরীক্ষার নামে অর্থ আদায়

বিপ্লব সিকদার :

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দেশের প্রাথমিক শিক্ষার মূল ভিত্তি। দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের পরিবারের সন্তানরা যাতে বিনামূল্যে শিক্ষা লাভ করতে পারে, এজন্যই এই বিদ্যালয়গুলো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সরকারও শিক্ষার্থীদের পাঠ্যপুস্তক থেকে শুরু করে বিভিন্ন সুবিধা নিশ্চিতে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য, কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার শিবনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে।

প্রধান শিক্ষক স্বীকার করেছেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে তিনি একদিকে অতিরিক্ত শিক্ষককে বেতন দিয়েছেন, অন্যদিকে বিদ্যালয়ের কিছু মেরামতের খরচ মেটিয়েছেন। তার যুক্তি যতই যুক্তিযুক্ত মনে হোক না কেন, প্রশ্ন হচ্ছে—এই অর্থ আদায়ের বৈধতা কোথায়? সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফি নেওয়ার কোনো বিধান নেই। কাজেই এটি নিঃসন্দেহে একটি অনিয়ম ও সরকারি নীতিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।

এ ধরনের অর্থ আদায় শুধু শিক্ষার্থীদের অধিকার হরণের শামিল নয়, বরং অভিভাবকদের ওপর অযাচিত চাপও সৃষ্টি করে। বিশেষ করে দরিদ্র পরিবারের জন্য ৬০ থেকে ১২০ টাকা বাড়তি বোঝা অনেক সময় সন্তানের শিক্ষার প্রতি বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। অনেক পরিবার সন্তানের পড়াশোনা চালাতে হিমশিম খায়, সেখানে পরীক্ষার নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করা মানে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি করা।

আমরা মনে করি, বিদ্যালয়ের আর্থিক সংকট সমাধানের দায়িত্ব সরকারের। প্রধান শিক্ষকের একক সিদ্ধান্তে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায় কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষা কর্মকর্তা যথার্থই এটিকে অনিয়ম বলেছেন। এখন প্রয়োজন, দ্রুত তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া টাকা ফেরত দেওয়া।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মূল দর্শন হলো—সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষা। এই দর্শন বাস্তবায়নে কোনো ধরনের অনিয়ম বা অর্থ বাণিজ্য যেন না হয়, সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর হতে হবে। অন্যথায় শিক্ষার মূল লক্ষ্য বাধাগ্রস্ত হবে, আর এর ক্ষতি পূরণ করা সহজ হবে না।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা