নিজস্ব প্রতিবেদক।।
জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন অবশেষে রাজসাক্ষী হয়েছেন। মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন প্যানেলে তিনি জবানবন্দি দেন। সেখানে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ উত্থাপন করেন তিনি।
নির্বাচনের আগের রাতের ঘটনা
মামুন আদালতকে জানান, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালট বাক্স অর্ধেক ভরে রাখার পরামর্শ দেন সে সময়ের আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারী। পাশাপাশি পুলিশে সক্রিয় তথাকথিত “গোপালগঞ্জ সিন্ডিকেট” নিয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন তিনি।
গণঅভ্যুত্থান দমনে অস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ
তার ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে মারণাস্ত্র ব্যবহারের নির্দেশ এসেছিল সরাসরি শেখ হাসিনার কাছ থেকে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি চালানো, ব্লক রেইড পরিচালনাসহ নানা পদক্ষেপ রাজনৈতিকভাবে নেওয়া হয়েছিল। সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান ও ডিবি প্রধান হারুনুর রশীদকে তিনি “অতিউৎসাহী” হিসেবে চিহ্নিত করেন।
গোপন বন্দিশালা ও ক্রসফায়ার
মামুন আদালতে বলেন, র্যাব-১ এ “টিআইএফ” নামে একটি গোপন বন্দিশালা চালু ছিল। সেখানে ভিন্নমতাবলম্বী রাজনৈতিক কর্মীদের আটক রাখা হতো। এসব কর্মকাণ্ডের নির্দেশনা আসত প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকেই।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসায় গোপন বৈঠক
তার দাবি অনুযায়ী, প্রভাবশালী পুলিশ কর্মকর্তারা প্রায়ই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বাসায় রাতভর বৈঠক করতেন। এসব বৈঠকে হাবিবুর রহমান, হারুনুর রশীদ, মনিরুল ইসলামসহ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা অংশ নিতেন। কারও কারও সঙ্গে শেখ হাসিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল বলেও জানান মামুন।
সমন্বয়কদের নির্যাতন
আন্দোলন চলাকালে সমন্বয়কদের আটক ও মানসিক নির্যাতনের নির্দেশ এসেছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছ থেকেই বলে অভিযোগ করেন তিনি।
স্বেচ্ছায় রাজসাক্ষী হওয়া
গত ২৪ মার্চ মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও মামুন উল্লেখ করেছিলেন যে, তিনি “সত্য উন্মোচনের স্বার্থে” স্বেচ্ছায় আসামি থেকে রাজসাক্ষী হয়েছেন।
প্রসিকিউশনের অবস্থান
প্রসিকিউশন জানায়, ইতোমধ্যে আহত ব্যক্তি, শহীদ পরিবারের সদস্য এবং চিকিৎসকসহ ৩৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে। চলতি মাসের মধ্যেই সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।