• শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন
  • [gtranslate]
সর্বশেষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আগমন ও ড. মোশাররফের বিএনপিতে আত্মপ্রকাশ মেঘনার ভাটের চর–বি আর টিসি মোড় সড়ক: বরাদ্দকৃত অর্থ পুকুরচুরি নয়তো? দিপুর শরীরের রক্ত ঝরেনি, যুবদলের রক্ত ঝরেছে মেঘনায় যুবদলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রধান অতিথি  থাকছেন ড. খন্দকার মারুফ হোসেন নির্বাচন কীভাবে হবে তা রাজনৈতিক নেতারা ঠিক করবেন: প্রধান উপদেষ্টা যুবসমাজকে খেলাধুলার মাধ্যমে ঐক্যবদ্ধ রাখার আহ্বান ড. খন্দকার মারুফ হোসেনের বিগত বছরের তুলনায় মেঘনায় এইচএসসি ফলাফলে ইতিবাচক অগ্রগতি মেঘনায় অধরাই রয়ে গেল মাদকের সম্রাটরা এইচএসসির উদ্বেগজনক ফলাফলের জন্য ফ্যাসিস্ট সরকারের ব্যর্থ শিক্ষানীতিই দায়ী : ড.খন্দকার মারুফ হোসেন মেঘনায় পানিতে ডুবে দুই শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আগমন ও ড. মোশাররফের বিএনপিতে আত্মপ্রকাশ

খন্দকার মারুফ হোসেন / ১৮ বার দেখা হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৫

 

খন্দকার মারুফ হোসেন:

১৯৭৮ সালের ২৬ অক্টোবর। সকাল ঠিক ৯টা ৫ মিনিট। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি, প্রধান সামরিক শাসক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পা রাখলেন।

সেসময় ক্যাম্পাস ছিল উত্তেজনাপূর্ণ। মুজিববাদী ছাত্রলীগ, জাসদ ছাত্রলীগ ও ছাত্র ইউনিয়নসহ সেই সময়ের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন তাঁর এই আগমন মেনে নিতে পারেনি। স্লোগান, প্রতিবাদ – সব মিলিয়ে পরিবেশ ছিল বেশ উত্তপ্ত। তবুও সব বাধা উপেক্ষা করে জিয়াউর রহমান উপস্থিত হন টিএসসি মিলনায়তনে, যেখানে শিক্ষকদের সাথে তাঁর পূর্বনির্ধারিত মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

মঞ্চে উঠে শুভেচ্ছা বিনিময়ের পর তিনি আসনে বসেন। অনুষ্ঠান শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য তাঁর উদ্দেশে অত্যধিক প্রশংসাসূচক বক্তব্য দিতে থাকেন। এতে রাষ্ট্রপতির বিরক্তি প্রকাশ পায়। তিনি সরাসরি বলে ওঠেন – “আমি তোষামোদ শুনতে আসিনি। বাইরে আমার বিরুদ্ধে যে স্লোগান হয়েছে, সেই বাস্তবতার সাথে এসব কথার মিল নেই।”

এরপর বক্তব্য দিতে ওঠেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক বি. করিম। তিনিও কিছুটা ইতস্তত করে একই ধরনের সৌজন্যমূলক মন্তব্য করতে থাকলে জিয়াউর রহমান তাঁকে থামিয়ে দিয়ে অপেক্ষাকৃত তরুণ একজন শিক্ষকের বক্তব্য শোনার আহ্বান জানান। আলোচনার পর শিক্ষকরা ভূতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে বক্তব্য দেওয়ার অনুরোধ করেন।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মঞ্চে উঠতেই জিয়াউর রহমান তাঁকে নির্ভয়ে কথা বলার আশ্বাস দেন। এরপরই শুরু হয় এক সাহসী, স্পষ্টভাষী বক্তব্য। ড. মোশাররফ প্রশ্ন তোলেন – স্বাধীন দেশে সামরিক শাসনের প্রয়োজন কেন? তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন – তাঁরই শাসনামলে কেন সামরিক শাসন চলবে? তিনি সরাসরি সামরিক শাসন প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সেসঙ্গে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু ও হল সংসদের নির্বাচন দ্রুত আয়োজনের অনুরোধ জানিয়ে বলেন, “আমরা শিক্ষকরা রাতে গোলাগুলির শব্দ না শুনে ঘুমোতে যেতে পারি না – এ অবস্থার অবসান চাই।”

ড. মোশাররফ হোসেনের দেওয়া নানা বক্তব্যকে ঘিরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তাঁর প্রায় পঁয়তাল্লিশ মিনিটের টানা বিতর্ক চলছিল। আলোচনা প্রাণবন্ত হয়ে ওঠার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি হঠাৎই প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন – “ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্ত্র আসে কোথা থেকে? প্রফেসর সাহেব, আপনাকেই বলতে হবে – ক্যাম্পাসে অস্ত্রের আগমন কীভাবে ঘটে?”

অপ্রত্যাশিত এই প্রশ্নে সভাকক্ষ মুহূর্তে নিস্তব্ধ হয়ে যায়। শিক্ষকমণ্ডলী থেকে শুরু করে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা সবাই হতবাক; সবাই ভাবছে – এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. মোশাররফ কী বলবেন?

ড. খন্দকার মোশাররফ কিছুক্ষণ নীরব থাকলেন। চারপাশের টানটান উত্তেজনা যেন আরও ঘনীভূত হলো। এরপর শান্ত, কিন্তু দৃঢ় কণ্ঠে তিনি বললেন –

“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অস্ত্র আসে কীভাবে – এ প্রশ্নের জবাব দেবে কে? বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ও দেশের প্রধান সামরিক শাসক? নাকি আমার মতো একজন নিরীহ শিক্ষক?”

শ্রোতারা নিঃশব্দে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইল; উত্তরের গভীর ইঙ্গিত যেন পুরো পরিবেশকেই বদলে দিল।

ড. মোশাররফের সেই পাল্টা প্রশ্ন শুনে রাষ্ট্রপতি শান্তভাবে বললেন, “প্রফেসর সাহেব, আপনার বক্তব্য এখানেই শেষ। দয়া করে আসনে বসুন।” এরপর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার নির্ধারিত বক্তব্য প্রদান করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন।

রাষ্ট্রপতি প্রস্থান করার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসমাজ এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতারা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে নিরাপত্তার স্বার্থে ক্যাম্পাস ছেড়ে সাময়িকভাবে আত্মগোপনে যাওয়ার পরামর্শ দেন। পরিস্থিতি বিবেচনা করে তিনি ক্যাম্পাস ত্যাগ করে কিছুদিনের জন্য আড়ালে অবস্থান করেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রপতির সফরের দুদিন পর বঙ্গভবনে সাপ্তাহিক মন্ত্রিসভার বৈঠক বসে। নির্ধারিত আলোচ্যসূচির সব বিষয় শেষ হওয়ার পর ‘বিবিধ’ নিয়ে আলোচনা শুরু করার কথা ছিল। রাষ্ট্রপতি জিজ্ঞেস করলেন, “বিবিধ বিষয়ে কারও কিছু বলার আছে?” কেউ উত্তর না দিলে তিনিই আলোচনা শুরু করেন।

প্রথমেই তিনি জানতে চান, দুদিন আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যে তরুণ শিক্ষক বক্তৃতা দিয়েছিলেন, তাঁকে কেউ চেনেন কি না। সবাই নীরব থাকলেও খাদ্যমন্ত্রী আবদুল মোমেন খান বললেন, “জি, আমি চিনি।” রাষ্ট্রপতি জানতে চাইলে তিনি ব্যাখ্যা করলেন, তাঁর ছেলে মঈন খানের খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওই শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয়েও একসঙ্গে চাকরি করেন। তার নাম খন্দকার মোশাররফ হোসেন।

এ শুনে জিয়াউর রহমান মোমেন খানকে নির্দেশ দিলেন – যেন তিনি ওই শিক্ষককে একদিন তাঁর কাছে নিয়ে আসেন। কিন্তু মন্ত্রীর মনে তখন খানিকটা দ্বিধা। তিনি ভাবছিলেন, এই রাজনৈতিক পরিবেশে রাষ্ট্রপতির হঠাৎ এমন ডাক, এতে কি কোনও ঝুঁকি আছে? তবুও দায়িত্ব বলে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিলেন।

খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন খান বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুলার রোডে অবস্থিত ড. মোশাররফ হোসেনের বাসায় ফোন করেন। সে সময় ড. মোশাররফ বাইরে থাকায় ফোনটি ধরেন তাঁর স্ত্রী বিলকিস আকতার হোসেন। তিনি মন্ত্রী মহোদয়কে জানান যে তাঁর স্বামী এই মুহূর্তে বাসায় নেই। এ কথা শুনে মন্ত্রী বিলকিস আকতারকে আশ্বস্ত করেন এবং জানান যে ড. মোশাররফ যেন দ্রুত বাসায় ফিরে আসেন।

খাদ্যমন্ত্রী আব্দুল মোমেন খানের কথায় ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আবার ফুলার রোডের বাসায় ফিরে আসেন। এর কিছুদিন পর এক শুক্রবার সকালে হঠাৎই একটি সেনাবাহিনীর গাড়ি ফুলার রোডের স্টাফ কোয়ার্টারে ঢুকে ১৪ নম্বর বিল্ডিংয়ের সামনে এসে থামে। মুহূর্তের মধ্যেই পুরো এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে, আর্মির গাড়ি নাকি ড. মোশাররফের বাসার সামনে!

অনেকে ধরে নিলেন, নিশ্চয়ই ড. মোশাররফকে গ্রেপ্তার করতে এসেছে সেনাবাহিনী। কিছুক্ষণ পরই একজন ডিউটি-ড্রেস পরা অফিসারসহ কয়েকজন সৈন্য ১৪/বি ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপলেন। দরজা খুলতেই সেনা সদস্যদের দেখে স্বভাবতই পরিবারের সবার মনেই একটা ভয়ের সঞ্চার হলো। ড. মোশাররফ শান্ত গলায় জিজ্ঞেস করলেন, “আপনারা কেন এসেছেন?”

আর্মির সদস্যরা জানালেন, তাঁকে তাদের সঙ্গে যেতে হবে। কথা শুনে ড. মোশাররফ মনে করলেন, সম্ভবত তাঁকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। তিনি বললেন, “তাহলে একটু অপেক্ষা করেন, কাপড় গুছিয়ে নিচ্ছি।”

অফিসার বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “কাপড় গুছাতে হবে কেন?” ড. মোশাররফ হেসে বললেন, “কয়েকদিন থাকতে হলে তো কাপড় লাগবেই।” কিন্তু কাপড় গুছানোর সুযোগই দেওয়া হলো না। তাঁকে রেডি হবার সুযোগ দেয়া হলো। রেডি হয়ে তিনি সেনাবাহিনীর গাড়িতে উঠে রওনা দিলেন। আর পরিবারের সবাই রইলেন এক অজানা দুশ্চিন্তা আর আতঙ্কে।

আর্মির গাড়িটি ফুলার রোড পেরিয়ে শাহবাগ হয়ে ভিআইপি রোডের দিকে দুলে দুলে এগোচ্ছিল। ড. মোশাররফ তখনও জানেন না, তাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অজানা এক দুশ্চিন্তা বুকের ভেতর ক্রমেই ভারী হয়ে উঠছিল। ভিআইপি রোড পেরিয়ে গাড়ি বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ জাহাঙ্গীর গেট দিয়ে ঢুকে পড়ল সেনানিবাসের ভেতর। তারপর নানা রাস্তা ঘুরে শেষ পর্যন্ত গাড়িটি থামল একটি বাড়ির গেটের সামনে।

তবু ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কোনো ধারণাই নেই যে এ কার বাড়ি! একজন অফিসার নীরবে বললেন, “স্যার, ভিতরে আসুন।”

বাড়ির ভেতর ঢোকার পর তিনি দেখলেন, একটি বাগানের পাশে ছাতার তলায় একটি টেবিল আর তিনটি চেয়ার সাজানো। তাকে বসতে বলা হলো। তিনি বসে অপেক্ষা করতে লাগলেন – কিন্তু এখনও জানেন না তিনি কোথায়, আর কেনই বা এখানে।

প্রায় পাঁচ মিনিট পর বাড়ির ভেতর থেকে সাদা পায়জামা-পাঞ্জাবি পরা একজন ব্যক্তি ধীরে ধীরে এগিয়ে এলেন। ক্রমশ পরিষ্কার হলো মুখটি। তিনি আর কেউ নন, তিনি বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান।

ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন অবশ্য পরে জানতে পারেন, এটি আসলে শহীদ মইনুল রোডের সেই বাড়ি, যেখানে উপ-সেনাপ্রধান থাকাকালেই মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান থাকতেন। সেনাবাহিনীর প্রধান হওয়ার পরও তিনি বাড়িটি ছাড়েননি। এমনকি রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহণের পরও পরিবারের সঙ্গে বঙ্গভবনে না উঠে তিনি এই বাড়িতেই বসবাস চালিয়ে যান।

রাষ্ট্রপতি মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে দেখেই ড. মোশাররফ উঠে দাঁড়িয়ে সালাম জানালেন। সালামের জবাব দিয়ে জিয়াউর রহমান হাত বাড়ালেন না; বরং ড. মোশাররফের বুকে হালকা থাপ্পর মেরে হেসে বললেন, “I have seen fire on you।” কথাটি বলার পর তিনি করমর্দন করলেন। রাষ্ট্রপতির এমন অপ্রত্যাশিত আচরণে ড. মোশাররফ কিছুটা বিস্মিত হন। এরপর রাষ্ট্রপতি তাকে বসতে বললেন এবং চা–কফি ও হরেক রকমের খাবার পরিবেশন করে আন্তরিক আপ্যায়ন করলেন।

কুশল বিনিময় শেষ হতেই রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান টিএসসিতে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সাহসী বক্তব্যের প্রশংসায় উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলেন। তিনি হাসিমুখে বললেন, “প্রফেসর সাহেব, দেশ আর জাতি নিয়ে আপনার জ্ঞান ও ভাবনা সত্যিই প্রশংসনীয়। আপনাদের মতো শিক্ষিত মানুষ রাজনীতিতে আসা উচিত। কী বলেন?”

হঠাৎ এমন প্রস্তাবে ড. মোশাররফ কিছুটা অস্বস্তিতে পড়লেন। শান্ত গলায় উত্তর দিলেন, “আমি তো একজন শিক্ষক, রাজনীতিতে আসার কোনো ইচ্ছা নেই। আর রাজনীতির অভিজ্ঞতাও তেমন নেই। মাত্রই তো ৭৫ সালে লন্ডন থেকে পিএইচডি করে ফিরে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো শুরু করেছি।”

জিয়াউর রহমান সঙ্গে সঙ্গে তার কথা থামিয়ে দিয়ে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় লন্ডনে ড. মোশাররফের অবদান মনে করিয়ে দেন। পাশাপাশি ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময় হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের ভিপি হিসেবে তার সক্রিয় ভূমিকার কথাও তুলে ধরেন। তারপর হালকা হাসিতে বলেন, “এই সব অভিজ্ঞতা নিয়ে আপনি বলেন, আপনার নাকি রাজনীতির অভিজ্ঞতা নেই! আর আমার সামনে সেদিন যে নির্ভীক বক্তব্য রাখলেন, তাতে তো স্পষ্ট, আপনি চাইলে অনেক কিছুই করতে পারেন। আপনি ক্যাম্পাসে থাকেন, ছাত্রদের চিনেন, আমার বিশ্বাস, আপনিই পারবেন আমাকে একটা ছাত্র সংগঠন গঠনে সাহায্য করতে।”

জিয়ার কথায় ড. মোশাররফ মুহূর্তের জন্য নীরব হয়ে গেলেন, প্রস্তাবটি ভারী, আর দায়িত্বটাও কম নয়।

বহুবার অনীহা প্রকাশ করলেও শেষ পর্যন্ত আর আপত্তি জানাতে পারেননি তিনি। শুধু রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে বলেছিলেন, এই অস্ত্রের ঝনঝনানির সময়ে একজন সাধারণ শিক্ষক হয়ে আমি কীভাবে নতুন ছাত্র সংগঠন গড়ে তুলব? জিয়া উত্তর দিয়েছিলেন, অস্ত্রহীন ও সন্ত্রাসমুক্ত সুস্থ ছাত্ররাজনীতি প্রতিষ্ঠাই আমার লক্ষ্য। আমি এমন একটি ছাত্র সংগঠন চাই, যারা দেশের সংকট ও দুর্যোগে ভ্যানগার্ডের ভূমিকা রাখবে।

রাষ্ট্রপতি জিয়ার সেই স্বপ্নের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালের ১ জানুয়ারি তাঁর নেতৃত্বে এবং ড. মোশাররফের হাত ধরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের জন্ম হয়। একই বছর বিএনপির প্রথম জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে প্রেসিডেন্ট জিয়া ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনকে ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনীত করেন। ১৯৭৯ সালের কাউন্সিলের মাধ্যমে তিনি কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৮৬ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন দলের যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ১৯৯৪ সাল থেকে টানা ৩১ বছর ধরে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ – মোট তিনবার জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাশাপাশি তিনবার মন্ত্রিত্বের দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।

লেখক: এডভোকেট, আপিল বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট ও সদস্য, জাতীয় নির্বাহী কমিটি, বিএনপি


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।

এই জাতীয় আরো খবর দেখুন