মেঘনা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে মাদক ও জুয়ার নীরব বিস্তার জনজীবনকে ক্রমেই অস্থির করে তুলছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাতের আঁধারে সক্রিয় কয়েকটি চক্র বাজার, চায়ের দোকান ও নির্জন স্থানে জুয়ার আড্ডা পরিচালনা করে; আর নদীপথ ব্যবহার করে মাদক প্রবেশ করায় দক্ষ নেটওয়ার্ক। সাধারণ মানুষ বলছেন—এই দুই অপরাধ এখন সমাজের ভিত্তি নড়বড়ে করে দিচ্ছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, দিনের বেলায় স্বাভাবিক পরিবেশ থাকলেও রাত ১০টার পর চালিভাঙ্গা, বটতলা, মাতার কান্দি, চন্দনপুর শিবনগরসহ প্রতিটি ইউনিয়নে এমনকি ট্রলার নিয়ে নদীতে শুরু হয় ছোট-বড় জুয়ার আসর। তাস, জুয়া বোর্ড ও “ফন্টি”র মতো খেলা চলে নগদ টাকায়। তরুণদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো, যা পরিবারগুলোতে দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। অনেকেই ধারদেনায় জড়িয়ে সামাজিক মর্যাদা হারাচ্ছেন।
একই সঙ্গে মাদকের রুট নিয়ন্ত্রণে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে নদীপথ। নারায়ণগঞ্জ–গজারিয়া–মেঘনা হয়ে ইয়াবা, আইস ও দেশীয় মদ নিয়মিত প্রবেশ করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা ব্যবহার করে রাতের অন্ধকারে চরাঞ্চলকে ‘ট্রানজিট পয়েন্ট’ বানানো হয়। স্থানীয় কয়েক প্রভাবশালীর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এই নেটওয়ার্ক চলতে পারছে না—এমন অভিযোগও রয়েছে।
পরিবার, শিক্ষা এবং সামাজিক পরিবেশে নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। মাদকাসক্ত তরুণদের কারণে দেখা দিচ্ছে পারিবারিক অশান্তি, আর জুয়ার টানে ক্রমেই ভাঙছে সঞ্চয় ও শান্তি। স্থানীয়দের ভাষ্য, “বলার মতো পরিবেশ নেই—বললেই হুমকি আসে।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঝে মাঝে অভিযান হলেও স্থায়ী সমাধান মিলছে না। অনেক সময় অভিযানের আগেই চক্রগুলো পালিয়ে যায়। প্রশাসনের একাধিক দায়িত্বশীল সূত্রও স্বীকার করেছে—“মাদক ও জুয়ার নেটওয়ার্ক ভাঙতে আরও শক্ত ও সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন।”
মেঘনার সাধারণ মানুষের দাবি—মাদক ও জুয়ার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা, প্রতিটি জুয়ার আসর চিহ্নিত করে নিয়মিত অভিযান, নদীপথে টহল জোরদার এবং মাদক ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রকাশ। তাদের মতে, এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গুরুতর ঝুঁকিতে পড়বে।