May 4, 2024, 8:10 am
সর্বশেষ:
মেঘনায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে জেলা প্রশাসকের মতবিনিময় মাদ্রাসার বরাদ্দকৃত অর্থ আত্মসাত করেছে অধ্যক্ষ মেঘনায় বিএনপি থেকে বহিস্কৃত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করায় একাধিক নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দুদকের পরিচালক থেকে মহাপরিচালক পদে পদন্নোতি পেলেন শিরিন পারভীন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন মন্ত্রী–এমপিদের চাপে মাঠ প্রশাসন,  স্পিকারকে চিঠি দেবে ইসি মেঘনায় পাকের ঘরে রাতে আগুন দিয়েছে দূর্বৃত্তরা মেঘনায় ফেসবুক ‘ফেক’ আইডির বিরুদ্ধে উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীর অভিযোগ শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে অনিয়মের সত্যতা পেয়েছে দুদক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে হেট্ট্রিক করতে ভোটারের দ্বারেদ্বারে শিরিন মেঘনায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়

একজন হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী

১০ জুন ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,

মো. শফিকুল আলম,
বাংলাদেশ প্রতিদিন :

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কূটনীতিক ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ২০০১ সালের ১০ জুলাই এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন। আমার জীবনে এ দিনটি যেন এক অপেক্ষার লগ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। যত দিন বেঁচে থাকব তত দিন ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য এ দিনটির অপেক্ষায় থাকব। স্পিকার স্যার মারা যাওয়ার পরও তাঁর প্রিয় সহধর্মিণী মাহজাবীন চৌধুরী তাঁদের একমাত্র পুত্র নোমান রশীদ চৌধুরী ও একমাত্র কন্যা নাসরিন করিম চৌধুরীর সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল।

দুঃখের বিষয়, তাঁরা কেউ আর আজ বেঁচে নেই। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট স্বধীনতাবিরোধী পরাজিত শক্তি জাতির জনককে নির্মমভাবে সপরিবারে হত্যা করে। প্রবাসে থাকায় তাঁর দুই কন্যা আজকের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা সৌভাগ্যক্রমে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান। হতে পারে বাবার সারা জীবনের স্বপ্ন দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর পথ সুগম করার জন্য পরম করুণাময় তাঁদের ঘাতকের নির্মম বুলেট থেকে রক্ষা করেছিলেন। সেই দুঃসময়ে জার্মানিতে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালনকালে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতির জনকের দুই কন্যাকে আশ্রয় দিয়ে শুধু মানবিক দায়িত্বই পালন করেননি, সেদিন বাঙালি জাতির মুখও রক্ষা করেছিলেন। আমার বিশ্বাস, স্বাধীনতাপ্রিয় বাঙালি তাঁকে এ বিশেষ কারণেও চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। একজন বাঙালি হিসেবে আমিও তাঁকে এ কারণেই ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।

কিন্তু ঘটনাক্রমে ১৯৯১ সালের শেষ দিকে এই মহান মানুষটির সঙ্গে আমার শুধু পরিচয়ই নয়, আমৃত্যু আত্মার সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

কুমিল্লার হোমনা-দাউদকান্দির যে নিভৃত এলাকায় আমার জন্ম, রাজধানী ঢাকার অতিনিকটবর্তী হলেও এ ভূখন্ডটি ছিল চারদিক থেকে নদী দ্বারা বিচ্ছিন্ন একটি দুর্গম চরাঞ্চল। জনমদুঃখী মানুষের করুণ চিত্র সেই শৈশব-কৈশোরে চোখের সামনে দেখেছি। প্রায় সারা বছরই হাঁটু কিংবা কোমর পানি ভেঙে মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলাফেরা করতে হতো। প্রসব বেদনায় কাতর কোনো মা কিংবা অশীতিপর বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে খাটিয়ায় করে চিকিৎসার জন্য কোথাও নিতে পথিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করেছেন, এমন অসংখ্য বেদনার স্মৃতি এখনো মনকে নাড়া দেয়। প্রান্তিক ক্ষুদ্র চাষি ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠী পরিবার-পরিজন নিয়ে কর্মসংস্থানের অভাবে সারা বছর অনাহারে-অর্ধাহারে কাটাতে হতো। ছিল না কোনো ন্যূনতম রাস্তাঘাট, যোগাযোগব্যবস্থা, ছিল না শিক্ষা-দীক্ষার তেমন কোনো সুযোগ। এরূপ বাস্তবতায় মুক্তির পথ হিসেবে একটি প্রশাসনিক থানা গঠনের দাবি এ অঞ্চলের মানুষের মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। কত মন্ত্রী-এমপি নেতা যান-আসেন কিন্তু ওদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। ছাত্রজীবন থেকেই অনেকটা অজান্তেই এলাকাবাসীর এ দুঃখ দূর করার স্বপ্ন আমার বুকে বাসা বাঁধে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় এ স্বপ্ন বাস্তবায়নের তাগিদ আমার মধ্যে প্রবল হয়ে ওঠে। আমি সুযোগ খুঁজতে থাকি! কিন্তু মনে মনে প্রতিজ্ঞা করি আমার প্রিয় এলাকাবাসীর আজন্ম লালিত স্বপ্ন একটি প্রশাসনিক থানা গঠনের মধ্য দিয়ে এ দুঃখকে একদিন আমি দূর করবই ইনশা আল্লাহ। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও জাতির জনকের আদর্শকে রাজনীতির আদর্শ হিসেবে আত্মস্থ করেছি। তাই চাকরি-বাকরি করব না, রাজনীতিকেই দেশের মানুষের সেবা করার ব্রত হিসেবে বেছে নিই, আজও সেই পথেই আছি। তাই ছাত্রজীবন শেষ করে দলের তৃণমূলের কর্মী হয়ে গ্রামে ফিরে যাই। ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৎকালীন কুমিল্লা-১ (হোমনা-দাউদকান্দি) আসন থেকে আওয়ামী লীগের সর্বকনিষ্ঠ প্রার্থী হিসেবে (প্রথম) দলের মনোনয়ন পাই, যদিও তিন সপ্তাহ পর দলের নির্দেশে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াই। কিন্তু হাল ছাড়িনি। অবশেষে দীর্ঘ ২৩ বছর পর হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে জাতির জনকের কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ১৯৯৬-এর সংসদ নির্বাচনে জনতার রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী ও হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী জাতীয় সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হন। শুরু হয় আমার জীবনের এক নতুন অধ্যায়ের। একদল তরুণ ও কিছু বিশ্বস্ত সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন একটি প্রশাসনিক থানা গঠনের বার্তা নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়াই।

এরই ধারাবাহিকতায় আমাকে সভাপতি করে গঠিত হয় ‘মেঘনা উপজেলা বাস্তবায়ন কমিটি’। সে কমিটির আমন্ত্রণে স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী ১৯৯৭-এর ১৭ মে রামপুর রাজারস্থ চরাঞ্চলে এসে আমার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে ‘মেঘনা’ নামে একটি উপজেলা গঠনের আশ্বাস দেন। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ২৬ আগস্ট নিকার-এর ৮৩তম সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘মেঘনা উপজেলা’ গঠনের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। সেই থেকে বাংলার মানচিত্রে আরেকটি উপজেলার সৃষ্টি হয়। পূরণ হয় আমার আজীবনের স্বপ্নসাধ। আমি এ উপজেলার প্রথম প্রতিষ্ঠাতা উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হই। রাস্তাঘাট, পুল, কালভার্ট, অফিস-আদালত, ব্যাংক, হাসপাতাল, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ ইত্যাদি সুষম উন্নয়নের মধ্য দিয়ে মেঘনা উপজেলা যেন আজ এগিয়ে চলছে দুর্বার গতিতে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে দোকানপাট, হাজার হাজার বেকার যুবক-যুবতীর কর্মসংস্থান, দৃষ্টিনন্দন দালান-কোঠা নির্মাণ ইতোমধ্যেই এক অবিশ্বাস্য ও বিস্ময়কর পরিবর্তন সাধিত হয়েছে; যা কল্পনাকেও হার মানায়। এ সবকিছুর মূলেই ‘মেঘনা উপজেলা’র প্রতিষ্ঠা। আমিও একদিন থাকব না। মেঘনা উপজেলা থাকবে। দুঃখী মানুষের নেত্রী, বিশ্বমানবতার মা, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মহানুভবতার কথা মেঘনাবাসী কোনো দিনই ভুলবে না, কোনো দিন ভুলবে না হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অবদান ও তাঁর অমর স্মৃতি।

লেখক : সভাপতি, মেঘনা উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, কুমিল্লা।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা