November 24, 2024, 5:55 am

ভুক্তভোগী ও মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ বন্ধ করুন: হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

৮’এপ্রিল ২০২২,বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
আন্তর্জাতিক ১২টি সংস্থা অভিযোগ করে বলেছে, বাংলাদেশের বিশেষায়িত ইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বানী র‍্যাপিড অ্শন ব্যাটালিয়নের (র‍্যাব) ওপর মার্কিন অর্থ দপ্তরের নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় বাহিনীটি ভুক্তভোগীদের স্বজন, মানবাধিকারকর্মী, তাদের পরিবার ও মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক আচরণ করছে। গতকাল বৃহস্পতিবার মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমনটি বলা হয়েছে।

অভিযোগকারী সংস্থাগুলো হচ্ছে—অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, অ্যান্টি ডেথ পেনাল্টি এশিয়া নেটওয়ার্ক, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলান্টারি ডিসঅ্যাপেয়ারেন্স, এশিয়া ফোরাম ফর হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ফোরাম-এশিয়া), এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেনকশন্স, ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট জাস্টিস প্রজেক্ট, সিভিকাস: ওয়ার্ল্ড অ্যালায়েন্স ফর সিটিজেন পার্টিসিপেশন, ইলিওস জাস্টিস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন ফর হিউম্যান রাইটস, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস এবং ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমসহ গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগের প্রতিক্রিয়ায় ২০২১ সালের ১০ ডিসেম্বর র‍্যাব এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

নির্ভরযোগ্য সূত্রের বরাত দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার পর থেকে র‍্যাব এবং ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স (এনএসআই) ভুক্তভোগী এবং মানবাধিকারকর্মীদের হুমকিমূলক ফোন কল করছে, তাঁদের স্থানীয় অফিসে ডেকে পাঠাচ্ছে এবং মধ্যরাতে তাঁদের কর্মস্থল ও বাড়িতে হানা দিচ্ছে।

  • একটি ঘটনায় দেখা যায়, র‍্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থা একজন মানবাধিকারকর্মীর আত্মীয়কে এ বছরের ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি থেকে মার্চের শুরু পর্যন্ত হয়রানি করেছে। ওই আত্মীয় যেহেতু গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারকে সমর্থন করতেন, তাই তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাষ্ট্রবিরোধীথ কার্যকলাপে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। আরেকজন মানবাধিকারকর্মী বলেছেন, র‍্যাব কর্মকর্তারা মধ্যরাতে তাঁর বাড়িতে গিয়েছেন এবং গুমের শিকার ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। র‍্যাবের কর্মকর্তারা এই কর্মীর কর্মস্থলেও যান এবং এই বলে হুমকি দেন, ‘তথ্য গোপন করলে নিজের জন্য আরও সমস্যা হবে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আরও লিখেছে, মানবাধিকারকর্মীদের হয়রানি করার জন্য সরকার কঠোর আইন ও আদালতকে ব্যবহার করছে। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি পাটকেলঘাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাংবাদিক জহুরুল হকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে সরকার ও পুলিশের সমালোচনামূলক পোস্ট করার অভিযোগ এনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর এবং নির্বাসিত সাংবাদিক তাসনীম খলিলের বিরুদ্ধে ‘গুজব ছড়ানোথ এবং ‘সরকারবিরোধীথ কার্যকলাপে অংশ নেওয়ার অভিযোগ তুলে ঢাকা সাইবার ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ গঠন করে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের নেতা আদিলুর রহমান খান এবং এ এস এম নাসিরুদ্দিন এলান ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি হচ্ছেন। মানবাধিকারকর্মীদের পরিস্থিতি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিবেদক মেরি ললর উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘ন্যায্য বিচারের নিশ্চয়তা বজায় রাখতে আদালত ব্যর্থ হয়েছে এবং এর স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।

বেসরকারি সংস্থা অ্যাফেয়ার্স ব্যুরোর সঙ্গে অধিকারের চুক্তি নবায়নের আবেদনটি ২০১৪ সাল থেকে মুলতুবি হয়ে ছিল। বছরের পর বছর নিষ্ক্রিয় থাকার পর গত ফেব্রুয়ারিতে আবেদনটি পাস হলে অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো অধিকারকে একটি চিঠি পাঠায়, যেখানে ২০০৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত নিখোঁজ হওয়া প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, সুনির্দিষ্ট তথ্য ও নথিপত্র চেয়ে অনুরোধ করা হয়েছে।

গত ১৪ মার্চ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, মানবাধিকারকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ গ্রহণ মানবাধিকারের কাজকে নিরুৎসাহিত করতে ও বাধা দিতে পারে। বাংলাদেশের উচিত অবিলম্বে মানবাধিকারকর্মী, গুম হওয়া ব্যক্তিদের আত্মীয় এবং মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে সব কার্যক্রম বন্ধ করা। মানবাধিকার সংস্থাগুলো জাতিসংঘের উদ্বেগের প্রতি সাড়া দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে র‍্যাবে কর্মরত কাউকে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে না পাঠানোরও আহ্বান জানিয়েছে।

আন্তর্জাতিক ওই ১২টি সংস্থা বলেছে, বাংলাদেশের উচিত অবিলম্বে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার ব্যক্তি, মানবাধিকারকর্মী এবং তাঁদের পরিবারের বিরুদ্ধে সব প্রতিশোধমূলক কার্যক্রম বন্ধ করা। এসবের পরিবর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধে পূর্ণ জবাবদিহি নিশ্চিত করার প্রতি সরকারের মনোনিবেশ করা উচিত।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা