October 14, 2025, 1:00 am
সর্বশেষ:
সাহসিকতায় অনন্য নজির: পিপিএম পদকে ভূষিত হলেন এসআই খাজু মিয়া নির্বাচনী দায়িত্বে দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত নিজের বিবেক লিজ দেবেন না: দুদক কমিশনার তিতাস নদীতে ভাসছে ‘মিস্ট্রি হাউস’, কৌতূহল ছড়াচ্ছে চারপাশে মেঘনার দম্পতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত — এলাকায় শোকের মাতম মেঘনায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে মহড়া, র‍্যালি ও আলোচনা গজারিয়ার আনার পুর পরিকল্পিত ইউটার্ণের অভাবে মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ হোমনা পৌরসভার প্রশাসক ঘুমাচ্ছেন? চাঁদপুর নৌ পুলিশের সপ্তম দিনের অভিযানে ৫০ জেলে গ্রেফতার নদীতে ঝোপ: মেঘনাবাসীর সংস্কৃতি না নদী হত্যার বৈধ অজুহাত?

অভিযোগহীন অপরাধ: প্রশাসন জানে, তবুও নীরব কেন?

নিজস্ব প্রতিবেদক।।

মেঘনায় এখন এমন এক বাস্তবতা গড়ে উঠেছে, যেখানে অপরাধ হয় প্রকাশ্যে, কিন্তু কেউ মুখ খুলে না। কারণ কেউ জানে—‘বললে বিপদ হবে’, আর কিছু বললেই শুনতে হবে: দলীয় ষড়যন্ত্র, ব্যক্তিগত আক্রোশ বা রাষ্ট্রদ্রোহের তকমা।’ প্রশাসনও এসব দেখে না দেখার ভান করে, হয়তো কেউ চাপে, কেউ আপসে।

অভিযোগ নেই মানেই অপরাধ নেই?

প্রশাসন বা রাজনৈতিক মহল অনেক সময় দাবি করে—“কোনো লিখিত অভিযোগ নেই।” কিন্তু বাস্তবতা বলছে, মানুষ আর অভিযোগ করতে সাহস পায় না।

কেন অভিযোগ করে না মানুষ?

থানায় গেলে আগে পরিচয় জিজ্ঞেস করা হয়—“আপনি কার লোক?”

অভিযোগ দিলেও কার্যকর তদন্ত হয় না

পরে হুমকি আসে—“মামলা তুলে নাও, না হলে বিপদ”

স্থানীয় নেতারা চাপ দেন—“বাইরের লোক ডাকলে কিন্তু খারাপ হবে”

 

খোলা চোখে দেখা যায় না প্রশাসনের প্রতিক্রিয়া

কী কী অপরাধ চলছে খোলামেলা?

চাঁদাবাজি (নির্মাণ, বাজার, ইজারা)

মাদক ব্যবসা (ইয়াবা, ফেনসিডিল, গাঁজা)

নদীপথে ভারতীয় পণ্যের চোরাচালান

সরকারি সেবা নিতে ঘুষ

জমি দখল ও দলীয় ক্যাডার দ্বারা জবরদখল

নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ধামাচাপা দেওয়া

 

একজন ভুক্তভোগী বলেন—

> “আমার বোনকে নির্যাতন করেছিল এক চেয়ারম্যান ঘনিষ্ঠ লোক। থানায় অভিযোগ দিতে বললে সবাই বলল—‘বাঁচতে চাও তো চুপ থাকো’। আমি চুপই থাকলাম।”

 

নিয়ন্ত্রণে কে? ‘অদৃশ্য’ এক প্রভাবশালী চক্র

প্রতিটি অপরাধের পেছনে কোনো না কোনো রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে বলেই স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন। অনেকে নাম বলতে চান না, কারণ তারা জানেন, কেউ কথা বললেই—

রাতের অন্ধকারে ভয় দেখানো হয়

মামলা দিয়ে হয়রানি

দলবিরোধী, সরকারবিরোধী, এমনকি রাষ্ট্রবিরোধী ঘোষণা

একটি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি বলেন:

> “আমরা জানি কারা টাকা তোলে, কে ভাগ পায়। কিন্তু প্রশাসনের সামনে বলি না, কারণ তারা জানে, তারাও জড়িত।”

 

নেতাদের ভিড়ে প্রশাসনিক কাজ ব্যাহত

অনেক দপ্তরে অভিযোগ রয়েছে—রাজনৈতিক নেতাদের অবাধ যাতায়াত, হস্তক্ষেপ ও প্রভাবশালীদের ‘চাওয়া-পাওয়া’র কারণে সাধারণ মানুষ প্রশাসনের দোরগোড়ায় যেতে ভয় পায়।

দলীয় পরিচয়ে অগ্রাধিকার সেবা, সাধারণ মানুষ সেবা পাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। কারণ বিশিষ্ট জনদের সৌজন্যবোধে বিব্রত প্রশাসন দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষায় বিরক্ত সাধারণ মানুষ।

সার্বিক চিত্র: আইন আছে, প্রয়োগ নেই

বিষয় বাস্তবতা

পুলিশ শুধু রুটিন টহল, বড় অভিযান নেই
প্রশাসন আপস ও চাপের ভারে নীরব
মানুষ ভয়ে নীরব, অভিযোগ করে না
রাজনীতি সবকিছু ‘কন্ট্রোল’ করে রাখার চেষ্টা

 

সমাধানের পথ কোথায়?

* অভিযোগ গ্রহণ ও তদন্ত প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা আনতে হবে
* তথ্যদাতাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে
*প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক প্রভাব কমাতে হবে
*জনগণের মাঝে আইন সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে
*স্বতন্ত্র তদন্ত টাস্কফোর্স গঠনের দাবি উঠতে পারে

চুপ থাকা মানে দায় এড়ানো নয়

যখন প্রশাসন চোখ বন্ধ করে, রাজনৈতিক নেতৃত্ব অপরাধ ঢাকে, আর সাধারণ মানুষ চুপ থাকে—তখন একটি জনপদ অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে ওঠে। মেঘনার এই বাস্তবতা যদি এখনই বদলানো না যায়, তবে আগামীতে তা জাতীয় সংকটে পরিণত হবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা