২৯ মে ২০১৯ বিন্দুবাংলা টিভি. কম,
ডেস্ক রিপোর্ট: ৩দিন ধরে গর্ভকালীন ব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন মৌলভীবাজারের ঈটা চা বাগানের সীতা গোয়ালা। সোমবার (২৭ মে) দুপুর ২টায় সীতাকে নিয়ে কমলগঞ্জের ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসেন তার স্বামী বাবু শংকর দোসাদ। হাসপাতালের সিনিয়র নার্স সানজানা শিরীন এসে দেখেন বাচ্চা পেটের অনেক উপরে রয়ে গেছে। অস্ত্রোপচার ছাড়া শিশু জন্মদান অনেকটা অসম্ভব। তবু চেষ্টা চালিয়ে যান শিরীন। প্রায় একঘণ্টার চেষ্টায় ‘অস্ত্রোপচার ছাড়াই সন্তান জন্ম দেন সীতা গোয়ালা। ৩.৮কেজি ওজনের একটি ছেলে শিশুর জন্ম দেন তিনি।
এ নিয়ে সোমবার পর্যন্ত এরকম ৪২৮টি ‘নরমাল ডেলিভারিথ করিয়েছেন নার্স সানজানা শিরীন। প্রতিটি গর্ভবতী নারীকে নিরাপদ মাতৃত্ব দিতে সব সময় প্রস্তুত থাকেন শিরীন। অস্ত্রোপচার ছাড়াই শিশু ভূমিষ্ঠ করানোই তাঁর নেশা। পেশায় নার্স হলেও শখের তাড়নায় নরমাল ডেলিভারি করানো তাঁর অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। একটি ডেলিভারি শেষ করেই নবজাতককে নিয়ে সেলফি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেন শিরীন।
২৮ মে পালিত হলো বিশ্ব নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। ‘মর্যাদা ও অধিকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রসূতি সেবার অঙ্গীকারথ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে সারা দেশের ন্যায় সিলেটেও পালিত হয় দিবসটি।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্মদানের হার বাংলাদেশে ক্রমাগতভাবে বাড়ছে। এতে ঝুঁকিতে পড়ছে মা ও শিশুর জীবন। অথচ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত করতে অস্ত্রোপচার ছাড়াই সন্তান জন্মে কাজ করে যাচ্ছেন সানজানা শিরীন।
সিলেটর হবিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা সানজানা শিরীন। বর্তমানে চাকুরী করছেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ থানায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন হাসপাতালে। এখানে ১৭টা চা বাগানের শুধুমাত্র চা শ্রমিকের চিকিৎসার দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, একজন মা ডেলিভারি আগে ৪৫ ভোল্ট ব্যথায় কাতরান। অনেক অনেক ব্যথা, এই ব্যথায় গালাগালি, লাত্তি দিয়ে ফেলেও দেন। কিন্তু আমি যখন তার এই ব্যথা থেকে রিলিফ দিতে সাহায্য করি তখন তিনি শান্তি পান। সেই শান্তির হাসি আর নবজাতকের কান্না আমার মনে প্রশান্তি দেয়। তাই গর্ভবতী মায়েদের নরমাল ডেলিভারি করানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করি আমি।
নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য নরমাল ডেলিভারির কোনো বিকল্প নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, অস্ত্রোপচারে বাচ্চা প্রসব করাতে গিয়ে মা অনেক ঝুঁকির মধ্যে থাকেন। অস্ত্রোপচারে বাচ্চা হলে একজন নারী পুনরায় মা হতে গেলে ঝুঁকি থাকে ৯০.৭%। শুধু তাই নয় অনেক সময় ছুরি, কাচি লেগে বাচ্চার বিভিন্ন অঙ্গ ক্ষতি হয়। মায়েরাও অস্ত্রোপচার পরবর্তী ইনফেকশনে ভোগেন। অথচ নরমাল ডেলিভারি করানোর পর একজন মা ডেলিভারির ২ ঘণ্টার মধ্যে স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারেন।
নরমাল ডেলিভারি করানো উপভোগ করেন শিরীন। তার কাজের ব্যাপারে শিরীন বলেন, বাইরে গিয়ে ডেলিভারি করাতে অনেক টাকা চলে যায় চা বাগানের গরিব মানুষের। তাই ক্যামেলিয়া হাসপাতালে আমি অন্যের ডিউটির সময় যেচে গিয়ে ডেলিভারি করানো চেষ্টা করি। কারণ এখানে ফ্রি ডেলিভারি।
শিরীন বলেন, আমাদের মেয়েদের জীবনটা যুদ্ধের। সব সময় সব জায়গায় যুদ্ধ করে টিকে থাকতে হয়। আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম হয়নি। এখনো ভালো কাজ করার জন্য যুদ্ধ করছি।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।