২৩ আগস্ট ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃসুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে প্রসবের ৫ বছর পর সন্তানের পিতৃপরিচয় নিয়ে শুরু হয়েছে তুলকালাম কান্ড। এ ঘটনায় ধূম্রজালের সৃষ্টি হলে বিষয়টি শেষমেষ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছে। আদালত স্থানীয় পুলিশকে ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দিয়েছেন।
ঘটনা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের পশ্চিম টিলাগাঁও গ্রামের ইদ্রিছ আলীর অপ্রাপ্ত বয়স্কা মেয়ে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী রিপা বেগম পর পুরুষের লালসার শিকার হয়ে গর্ভবতী হয়ে পড়ে। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম পঞ্চায়েতের লোকজন মেয়ের পরিবারবর্গের কথা অনুযায়ী ৫ মাসের অন্তসত্ত্বা অবস্থায় ২০১৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একই গ্রামের মিন্টু মিয়ার ছেলে রিপার খালাতো ভাই জাকির মিয়ার সাথে তাকে বিয়ে দেয়া হয়। বিয়ের পর থেকেই জাকির রিপাকে স্ত্রী হিসাবে মেনে নিতে রাজি হয়নি। নিকটাত্মীয় বলে বিষয়টি প্রথম থেকেই ধামাচাপা দেয়ায় লোকলজ্জায় বাড়ি থেকে চলে যায় জাকির। ৫ মাস পর রিপা একটি কন্যাসন্তান প্রসব করে। এ সময় জাকিরকে পিতার পরিচয়ে কন্যাসন্তান সিপার জন্ম নিবন্ধনও তৈরি করা হয়।
বিয়ের দীর্ঘদিন পর সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে বেরিয়ে আসে আসল তথ্য :
প্রতিবন্ধী রিপার পরিবার সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে রিপা গর্ভবতী হয়ে পড়লে গ্রাম পঞ্চায়েতর লোকজন মেয়ে পক্ষের কথা অনুযায়ী তাদের নিকটাত্মীয় একই গ্রামের জাকিরের ওপর দায় চাপিয়ে রিপাকে তার সাথে বিয়ে দেয়া হয়। এলাকাবাসী জানান, জাকিরের পরিবার নিরীহ বিধায় স্থানীয় মোড়লদের চাপে জাকির সন্তান সম্ভবা প্রতিবন্ধী রিপাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়। জোরপূর্বক তার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে বিয়ে দেয়ায় জাকির লজ্জায় বাড়িছাড়া হয়। পরে মাত্র ৫ মাস পরেই রিপা একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে এবং জাকিরকে তার পিতা বলেই তার জন্ম নিবন্ধন করা হয়। কিন্তু তখনো মূল ঘটনা আড়ালেই থেকে যায়। এ অবস্থায় এসব ধূম্্রজালে স্বামী হিসাবে জাকিরের সাথে সংসার করাটা মোটেই গ্রহনযোগ্য না হলে বিয়ের ৫ বছরের মাথায় সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে সমাজে মুখ খুলতে বাধ্য হয় প্রতিবন্ধী রিপা বেগম। স্থানীয় সালিশ বৈঠকে রিপা অভিযোগ করে, ওই সন্তানের পিতা জাকির নয়, তার (শিপা বেগম) জৈবিক পিতা একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র মাহবুব। রিপার পরিবার নিরীহ বিধায় মূল ঘটনাকারী ও তার আত্মীয়স্বজনদের প্ররোচনায় এবং স্থানীয় মোড়লদের চাপে পড়ে মুল বিষয়টি আড়াল করতে তাকে বাধ্য করা হয়েছিল। তখন জাকিরের ওপর দায়ভার চাপিয়ে জোরপূর্বক তাকে তার সাথে বিয়ে দেয়া হয় বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবন্ধী রিপা।
বিয়ের ৫ বছর পর খোদ সন্তানের জননীর মুখ থেকে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসায় এ নিয়ে আরো জটিলতার সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে একাধিকবার সালিশ বসলেও মাহবুব ও তার পরিবার সন্তান প্রসবের ৫ বছর পর সন্তানের পিতার দাবিটি অযৌক্তিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে তা মেনে নিতে রাজি না হওয়ায় বিষয়টি সমাধান হয়নি। অপরদিকে মাহবুবের পরিবার প্রভাবশালী বিধায় প্রতিবন্ধী হতদরিদ্র অসহায় রিপার পরিবারকে একঘরে করে রাখাসহ নানা ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে।
স্থানীয় সালিশপক্ষ বিষয়টি সমাধান দিতে ব্যর্থ হলে অবশেষে প্রতিবন্ধী রিপার বাবা হতদরিদ্র ইদ্রিস আলী আদালতের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। গত ১৩ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন আইন ২০০০ এর (সংশোধিত) ৯ (১) ও ১৫ ধারায় সন্তানের পিতৃ পরিচয়ের দাবিতে একই গ্রামের হাবিবুর রহমানের পুত্র মাহবুবকে প্রধান আসামী করে দুইজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্্রাইবুনাল, সুনামগঞ্জ বরাবরে মামলা (নং-২২৮/২০১৯) দায়ের করেন রিপার বাবা ইদ্রিছ আলী। সম্প্রতি আদালত সন্তানসহ অভিযুক্ত মাহবুব ও জাকিরের ডিএনএ টেস্টের নির্দেশ দেন দোয়ারাবাজার থানা পুলিশকে। পুলিশ উভয়ের ডিএনএ টেস্টের প্রস্তুতি নিলে মাহবুব এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দেয়।
দোয়ারাবাজার থানার ওসি আবুল হাসেম জানান, সন্তানের পিতৃ পরিচয় নিয়ে ধূম্রজালের সৃষ্টি হয়ায় বিজ্ঞ আদালত পুলিশ তদন্ত এবং উভয়ের ডিএনএ টেস্ট করার নির্দেশ দিয়েছেন।কিন্তু মাহবুব পলাতক থাকায় উভয়পক্ষের ডিএনএ টেস্ট করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বিলম্বিত হচ্ছে।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।