৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ঘিরে সারাদেশে মানুষের অভাবনীয় আবেগ-উচ্ছাস পরিলক্ষিত হয়েছে। এতে সরকারের প্রতি যে তীব্র ক্ষোভ ও প্রতিবাদ ধ্বণিত হয়েছে তা অবৈধ শাসকগোষ্ঠীর উপলব্ধির জন্য সতর্কবার্তা বলেও মনে করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, আওয়ামী আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী বিরোধী দল ও মত নির্মূলের ভাবধারায় অনুপ্রাণিত। তাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর কর্মসূচি বানচাল করার জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শাসকদলের গুন্ডা বাহিনী এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনী হামলা-মামলা ও নির্যাতন চালিয়েছে অবিরামভাবে। এতে গ্রেফতার ও আহত হয়েছে অনেক নেতাকর্মী। কিন্তু সকল বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে দেশের প্রতিটি জনপদ প্রকম্পিত করে ভোটহীন সরকারের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে দিয়েছেন জনগণ।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ৫৭২ দিন যাবত শেখ হাসিনার প্রতিহিংসার রোষে কারাবন্দী জনগণের প্রাণপ্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির শ্লোগানে মুখরিত হয়েছে আকাশ-বাতাস এই কর্মসূচির মধ্য দিয়ে, তাদের প্রাণপ্রিয় নেতা দেশনায়ক তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা ও ষড়যন্ত্র রুখে দেয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। আপনারা দেখেছেন-গতকাল সোমবার রাজধানীতে বিএনপির শোভাযাত্রায় মানুষের উর্মিমুখর জনতার শ্লোগান ধ্বণিত হয়েছে প্রস্তুতি, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধে। ঘরবাড়ি ছেড়ে ব্যথিত, বঞ্চিত ও অপমানিত জনগণ বিএনপিথর কর্মসূচিতে সংহতি জানাতে নেমে এসেছিল রাজপথে। মানুষের জোয়ারে ঢাকা শহর প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। লাখ লাখ মানুষ রাজপথ কাঁপানো শ্লোগানে শ্লোগানে সরকারের প্রতি স্বত:স্ফুর্ত অনাস্থা জানিয়েছে। তাই কালবিলম্ব না করে দেশনেত্রীকে দ্রুত নি:শর্ত মুক্তি দিন। এই অনির্বাচিত নিশি রাতের নির্বাচনের সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ঘোষণা করুন। তা না হলে রাজপথে এই জনবিস্ফোরণ রোধ করতে পারবেন না। তখন পালানোর গলিপথও খুঁজে পাবে না।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, তারেক রহমান গতরাতে লন্ডনে বিএনপিথর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আলোচনা সভায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণের মাধ্যমে সর্বদলীয় বৈঠক ডাকার যে প্রস্তাব রেখেছেন তা বাস্তবায়নের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহবান জানাচ্ছি। তাঁর এই প্রস্তাবই কেবল রোহিঙ্গা নিয়ে দেশ ও জাতি মহাসংকট থেকে পরিত্রান লাভ করতে পারবে। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জাতীয় সংকটে রূপ নিয়েছে। গত দুই বছরে সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতে পারেনি। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে প্রতিদিন জন্ম নিচ্ছে নতুন শিশু। এদের নাগরিকত্ব পরিচয় কি হবে ? কোন দেশের পরিচয়ে এরা বেড়ে উঠবে ? এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আবার নতুন খবর হলো-ভারতের আসামে নাগরিকত্বহীন করা হয়েছে ১৯ লাখের বেশী মানুষকে। শোনা যাচ্ছে-এদেরকে ঠেলে দেয়া হবে বাংলাদেশে। এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য আরো একটি বড় বিপদের আশংকা। ফলে, দলীয় স্বার্থ নয়, দলমত নির্বিশেষে প্রতিটি বাংলাদেশীকে এক কাতারে আসা এখন সময়ের দাবি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও দেশনায়ক তারেক রহমান সর্বাগ্রে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় জাতীয় ঐক্যের আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেছেন, রোহিঙ্গা সংকট কেবল দ্বিপাক্ষিক ইস্যু বিবেচনা করলে এই সংকট সমাধান হবেনা। এটি একপাক্ষিক কিংবা দ্বিপাক্ষিক নয়, এটি আন্তর্জাতিক ইস্যু। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলা করতে হলে আমাদেরকে জাতীয়ভাবে পলিসি নির্ধারণ করতে হবে। আর এই পলিসি নির্ধারণের জন্য প্রয়োজন সর্বদলীয় বৈঠক।
বৈঠকে রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি ছাড়াও সিভিল সোসাইটির প্রতিনিধি, বুদ্ধিজীবী, বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার প্রতিনিধি, দেশে-বিদেশে উচ্চপর্যায়ে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিকদের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। তাহলে এ বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত সারাবিশ্ব গুরুত্ব সহকারে দেখবে। মিয়ানমারও গুরুত্ব দিতে বাধ্য হবে।
রিজভী বলেন, নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে সরকার রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দুর্বোধ্য ধাঁধাঁর মধ্যে ফেলে রেখেছে জনগণকে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাড়তি ও থিতানো বিবৃতি ছাড়া রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় কিছুই করতে পারেননি। এখনো সময় আছে অবিলম্বে সর্বদলীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত করার। অবিলম্বে সাবেক প্রধানমন্ত্রী দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠকে তাঁর সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। ১৯৯১ এর পরে বেগম জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করতে কুটনৈতিক সফলতায় দক্ষতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন। সফলভাবে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা তাঁর রয়েছে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালনে বাধা দেয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালী ও সমাবেশে বাধা দিয়েছে। কোন কোন জায়গায় হামলা করে পন্ড করে দিয়েছে। মামলা দিয়েছে. গ্রেফতার ও নির্যাতন করেছে আমাদের নেতাকর্মীদেরকে। আমরা নিশিরাতের অনির্বাচিত সরকারের এই জুলুমের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কয়েকটি জায়গায় বাধা দেয়ার ঘটনা তুলে ধরে বিএনপির এই নেতা বলেন, ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পুলিশ আমাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালীতে হামলা চালিয়ে পন্ড করে দেয়। পুলিশের লাঠিচার্জে অন্তত: ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। পুলিশের বাধায় পন্ড হয়ে গেছে নওগাঁ জেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর র্যালী। রোববার সকালে লালমনিরহাট জেলা বিএনপি কার্যালয় থেকে র্যালী শহর প্রদক্ষিণ এর উদ্দেশে বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। পঞ্চগড় জেলা বিএনপি দলের ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করলেও র্যালী করতে দেয়নি পুলিশ। এমনকি কার্যালয়ের বাইরে মাইক ব্যবহারের অনুমতিও দেয়া হয়নি। সিলেটে র্যালি ও সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি আওয়ামী পুলিশ। কিশোরগঞ্জে পুলিশ বাধা দিয়েছে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী র্যালিতে। নারায়ণগঞ্জে র্যালীতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। চট্টগ্রামে র্যালীর অনুমতি দেয়নি। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুড়িগ্রামে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হলেও র্যালীতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। হবিগঞ্জে র্যালীতে বাধা দিয়েছে পুলিশ। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশী বাধার কারণে নির্ধারিত স্থানে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান করতে পারেনি বিএনপি। এছাড়া সকালে সরকারি কলেজের সামনে থেকে একটি মিছিল বের করতে চাইলে পুলিশ নেতাকর্মীদের বাধা দিয়ে ব্যানার ছিনিয়ে নেয়। এমনিভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠান পন্ড করে দিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা-বাহিনী।
ঢাকায় কয়েকজনকে গ্রেফতারের কথা জানিয়ে রুহুল কবির রিজভী বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে যাওয়ার পথে যুবদল নেতা আলামীন, আল হাসান, সুজন, সুমন, আকিব, অন্তর, ২৪ নং ওয়ার্ড ছাত্রদল নেতা রাজীবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।