২৮ এপ্রিল ২০২১,বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্ট :কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ আল্টিমেটাম দেওয়া হয়।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় উক্ত মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। আরও বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদ, কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি হুমায়ন আহমেদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শুভ্র মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল অনিয়ম-অসঙ্গতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের জন্য আন্দোলন ও সংগ্রাম করে যাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। এর ধারাবাহিকতায় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কলেজছাত্রী মোসারাত জাহান মুনিয়ার হত্যাকারী বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।
সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন বলেন, আইনের দৃষ্টিতে সকলেই সমান। কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। পরিবারের দাবি, মোসারাত জাহান মুনিয়াকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। একজন কলেজ পড়ুয়া নারীর অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে আনভীর যে অপরাধ করেছে তা দেশের প্রচলিত আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। মুনিয়ার পরিবার থানায় মামলা করার পরেও এখনো পর্যন্ত পুলিশ আসামিকে গ্রেফতার করেনি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা অবিলম্বে মুনিয়ার হত্যাকারী আনভীরের গ্রেফতার দাবি করছি। আসামি আনভীর জেলের বাহিরে অবস্থান করার কারণে বাদিকে প্রতিনিয়ত হুমকির শিকার হতে হচ্ছে যা ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। সরকারের নিকট প্রশ্ন, সায়েম সোবহান আনভীর কি রাষ্ট্রের চেয়ে শক্তিশালী? আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে রাষ্ট্রকে তার অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে। আমরা বিশ্বাস করি, বর্তমান সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর। মহান মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে যা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। আমরা অতীতেও বসুন্ধরা গ্রুপের অনেকের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড লক্ষ্য করেছি। অতীতের ঘটনাগুলোর সুষ্ঠু বিচার হলে আজকে হয়তো এরকম ন্যাক্কারজনক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটতো না।
আল মামুন আরোও বলেন, সায়েম সোবহান আনভীরদের মতো অপরাধীরা আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে গিয়ে পুনরায় অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সংঘটিত করছে। মুনিয়ার মতো হাজারো মেয়েদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ এরা ধ্বংস করে দিচ্ছে। আনভীররা সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য বড় অভিশাপ। আনভীরের প্রকৃত চরিত্র জাতির সামনে উন্মোচিত হয়েছে। ভদ্রতার মুখোশ পড়ে অপকর্ম করাই এদের মূল উদ্দেশ্য। গণমাধ্যম রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সাংবাদিকরা জাতির বিবেক। গণমাধ্যম সবসময় শোষিত ও নির্যাতিত মানুষের পক্ষে কথা বলে। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের ইস্যুতে অনেক গণমাধ্যমের নীরবতা ও পক্ষপাতিত্বমূলক আচরণ আমাদেরকে ব্যথিত করেছে।
আমরা প্রত্যাশা করি যে, অতীতের ন্যায় ভবিষ্যতেও সকল গণমাধ্যম সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে কথা বলবে। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডের সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য গণমাধ্যম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। আপনারা নিশ্চয়ই দেখেছেন যে, মুনিয়াকে হত্যা করেই আনভীর ক্ষান্ত হয়নি। ভিকটিম ব্লেমিং শুরু করেছে। মুনিয়া হত্যাকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য নানাবিধ ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্য আনভীর গংরা মুনিয়ার চরিত্র হননে লিপ্ত হয়েছে। মুনিয়াকে হত্যার পর কিছু গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার চরিত্র হনন করার চেষ্টা হয়েছে যা পুরো নারীসমাজকে হেয় প্রতিপন্ন করেছে বলে আমরা মনে করি। বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একজন নারীর সাথে প্রতারণা এবং পরিশেষে নৃশংসভাবে হত্যা করা কখনোই সভ্য মানুষের কাজ হতে পারে না।
বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের দাবি, সায়েম সোবহান আনভীরকে দ্রুত গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি মামলার বাদির সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুনিয়ার হত্যাকারী সায়েম সোবহান আনভীরকে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।