July 13, 2025, 7:02 am
সর্বশেষ:
দেবিদ্ধার লক্ষিপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের নতুন কমিটি তারেক রহমানের নির্দেশে ফুলগাজীতে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ মেঘনার ব্রাহ্মণচর নোয়াগাঁও আলিম মাদ্রাসার ফলাফলের করুণ চিত্র: দলীয়করণ ও দলাদলির বলি শিক্ষার্থীরা মেঘনায় এসএসসির ফলাফলে  শীর্ষে সাহেরা লতিফ বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি স্কুলের ফলাফলে হতাশা মেঘনায় মোড়ে মোড়ে কিশোর গ্যাং: স্থানীয় গডফাদারদের মদদে অপরাধে ব্যবহৃত হচ্ছে কিশোররা ঝুঁকিপূর্ণ সেতুতে বাল্কহেড আটকে জরিমানা ৩০ হাজার টাকা মেঘনায় চোরাচালান ও মাদকবিরোধী অভিযান এখন সময়ের দাবি গণমাধ্যম কর্মী : নতজানুতা বনাম সততা মেঘনা উপজেলা বিএনপির উপদেষ্টা পরিষদ দলের গঠন তন্ত্র অনুযায়ী করা হয়েছে : আক্তারুজ্জামান সরকার অভিযোগহীন অপরাধ: প্রশাসন জানে, তবুও নীরব কেন?

‘শ্রমিকরা চিৎকার করলেও বলা হয় ভেতরে থাকতে’

১০ জুলাই ২০২১, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, ডেস্ক রিপোর্টঃ

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাশেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজ লিমিটেডের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশতাধিক শ্রমিকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এদিকে কারখানার ভবনের নিচতলা থেকে প্রতিটি ফ্লোরই আগুনে ভস্মীভূত হয়েছে। আগুন লাগার পর দোতলা, তিনতলা থেকে কারখানার কর্মীরা বেরিয়ে আসে। পাঁচতলা ও ছয়তলার কর্মীরা ছাদে চলে যায়। আর চারতলার সিঁড়িতে তালাবদ্ধ থাকার কারণে কর্মীরা আটকা পড়েন। তারা নিচেও নামতে পারেন না আবার ছাদেও যেতে পারেনি।

শনিবার (১০ জুলাই) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত কারখানাটি সরেজমিনে ঘুরে, কারখানার জীবিত শ্রমিক ও আশপাশের প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

ইমরান আহমেদ নামের একজন পাঁচতলায় জুস তৈরির কাজ করতেন। তিনি জানান, চারতলায় তার পূর্ব পরিচিত ফাহিম নামের একজন কাজ করতেন। আগুন লাগার সময় ফাহিম ইমরানকে ফোনে জানান- চারতলা থেকে নিচে নামার গেটটি তালা দেয়া। আবার ছাদে ওঠার সিঁড়িতেও তালা দেয়া। চারতলায় ৫০ জনের বেশি কর্মী কাজ করছে। এ অবস্থায় তারা আটকে পড়ে।

ইমরান বলেন, পাঁচতলা থেকে সিড়ি দিয়ে নেমে চারতলায় গিয়ে দেখি গ্রিলে তালা দেয়া। এরপর অনেককে ফোন দিলেও কেউ তালা খুলতে আসেনি।

শিউলি খাতুন কাজ করতেন তিনতলায়। তিনি বলেন, নিচে আগুন লাগার খবর শুনে সবাই ভয় পেয়ে গিয়েছিল। তাড়াহুড়া করে নামতে নামতে অনেকেই সিঁড়িতে পড়ে যান। ভাগ্যক্রমে আমি নিচে নেমে আসি। কিন্তু আমরা আপন বোন হাসি আক্তার কাজ চারতলায় কাজ করতেন। তার খোঁজ এখনো পাইনি।

শিউলি বলেন, শুনেছি চারতলায় তালা দেয়া ছিলো। এ কারণে কেউ বের হতে পারেনি। ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নিয়েছি। ডিএনএ নমুনাও দিয়েছি। কিন্তু এখনো বোনের কোনো হদিস পাইনি।

হাসেম ফুডস লিমিটেডের চকলেট লাইনের অপারেটর হিসেবে কাজ করতেন হাবিবুল বাশার। তিনি জানান, বৃহস্পতিবার পাশের ভবনের চারতলায় ডিউটিতে ছিলেন তিনি। আগুন লাগার পরপরই ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে দেখেন নিচতলায় ধোঁয়া। এরপর ধীরে ধীরে আগুন ওপরের দিকে উঠতে থাকে। অনেকে লাফিয়ে পড়ছিলেন। কেউ আবার ভেতরে আটকা পড়ে চিৎকার করতে থাকেন। ভেতর থেকে প্রতিষ্ঠানের কেউ তখনো বলছিলেন- বড় কিছু হবে না। ভেতরে সবাইকে একসঙ্গে থাকার জন্য বলতে থাকেন।

হাবিব জানান, কারখানাটিতে অনেকে কাজ করেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের নিচে। বয়স যাদের কম, তাদের হালকা কাজ দেয়া হয়।

শ্রমিক তাজুল ইসলাম জানান, বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্টোররুম থেকে কিছু মালপত্র আনতে গিয়ে তিনি নিচ থেকে শ্রমিকদের চিৎকার শুনতে পান। সিঁড়ি দিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে ধোঁয়া দেখতে পান। ধোঁয়া আর আগুনের তাপ এতটা ছিল যে, নিচে নামার সুযোগ পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি সিঁড়ি বেয়ে পাঁচতলার ছাদের ওপর পানির ট্যাঙ্কির কাছে চলে যান। সেখানে তার মতো আরো ১৩-১৪ জন শ্রমিক আশ্রয় নেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গিয়ে দড়ি দিলে তারা নিচে নেমে আসেন।

ছাদ থেকে নেমে আসা আরেক শ্রমিক জাকির হোসেন বলেন, আগুন লাগার পর প্রচুর ধোঁয়া এবং তাপের কারণে নিচের দিকে নামতে পারছিলাম না। পরে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যাই। জীবনের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। পরে দড়ি বেয়ে অন্য শ্রমিকদের মতো নিচে নেমে আসি।

গত ৮ জুলাই বিকেলে রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের হাসেম ফুডস লিমিটেডের কারখানায় অগ্নিকাণ্ড ঘটে। ঘটনার প্রথম দিন তিনজনের মৃত্যু হয়। আহত হন অর্ধশত শ্রমিক। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের ১৮টি ইউনিট ২০ ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে আগুন প্রাথমিকভাবে নিয়ন্ত্রণে আনে।

এরপর গত ৯ জুলাই সকালে ওই ভবনের চারতলা থেকে ২৬ নারীসহ ৪৯ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। সব মিলিয়ে এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ জনে। ২৯ ঘণ্টা পর ৯ জুলাই রাতে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে আগুন।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা