৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং, বিন্দুবাংলা টিভি ডটকম,
বিপ্লব সিকদার :
ধর্মশালায় মেহেদী হাসান মিরাজ যেন সাউদাম্পটনের সেই সাকিব আল হাসান বনে গেছেন। ২০১৯ বিশ্বকাপে সাকিবের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল আফগানিস্তান। আজ এবারের বিশ্বকাপে সেই দৃশ্যে দেখা গেছে অলরাউন্ডার মিরাজকে। কিপটে বোলিংয়ে আফগানিস্তানের রানের গতি কমিয়ে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। ব্যাটিংয়ে নেমে তুলে নিয়েছেন দুর্দান্ত এক ফিফটি।সূত্র : আজকের পত্রিকা
ফলে বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় অব্যাহত থাকল বাংলাদেশের। ধর্মশালায় হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে চলতি বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৬ উইকেটের দাপুটে জয় পেয়েছে সাকিব আল হাসানের দল। এর আগে ২০১৫ ও ২০১৯ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের কাছে হেরেছিল আফগানিস্তান।
ধর্মশালার উইকেটে আগের সব ওয়ানডেতেই বোলারদের দাপট ছিল পরিষ্কার। তাই টস জিতে আফগানিস্তানকেই আগে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান। আফগানদের অল্প রানে আটকিয়ে রাখাই ছিল বাংলাদেশ অধিনায়কের লক্ষ্য। শুরুতে দুই আফগান ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান দারুণ ব্যাটিংয়ে সাকিবকে যেন ভুল প্রমাণই করে চলেছিলেন।
তবে সেটি হতে দেননি সাকিব নিজেই। নবম ওভারে দিলেন ব্রেকথ্রু এবং পরে দুটি উইকেটও ফেরালেন দ্রুত। মিরাজ-শরীফুলও রেখেছেন অবদান। তাতে ৩৭.২ ওভারে ১৫৬ রানেই গুটিয়ে যায় আফগানিস্তান। মিরাজ ও নাজমুল হোসেন শান্তর জোড়া ফিফটিতে ৯২ বল হাতে রেখেই এই রান তাড়া করে বাংলাদেশ।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় নেমেও বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল নড়বড়ে। দুশ্চিন্তার সেই ওপেনিং জুটি এবারও স্বস্তি দিতে পারেনি। ২৭ রানেই দুই ওপেনার লিটন দাস ও তানজিদ হাসান তামিম ফেরেন ড্রেসিংরুমে। ৫ রানে রান-আউট হয়েছেন তানজিদ তামিম। সপ্তম ওভারে ফজলহক ফারুকির বলে বোল্ড হন লিটন। তাঁর ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। তৃতীয় উইকেটে মিরাজ ও শান্ত ৯৭ রানের জুটি গড়ে চাপ সামলিয়ে দলের জয়ের ভিত গড়ে দেন।
২৯তম ওভারে নাভিন উল হকের শিকার হন মিরাজ। ৭৩ বলে ৫ চারের বাউন্ডারিতে ৫৭ রান করেছেন তিনি। ওপেনিং, লোয়ার মিডল অর্ডারের পর ৩ নম্বরেও নিজের ব্যাটিংয়ের ঔজ্জ্বল্য দেখিয়েছেন মিরাজ। ছন্দে থাকা মিরাজ তুলে নিয়েছেন ওয়ানডে সংস্করণের ষষ্ঠ ফিফটি। ৮৩ বলে বলে ৫৯ রানে অপরাজিত থাকেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। সাকিব ফিরেছেন ১৪ রানে। মুশফিকুর রহিম অপরাজিত ছিলেন ২ রানে। ৩৫ ওভারে চতুর্থ বলে নাভিনকে ৪ মেরে লক্ষ্য পূরণ করে বাংলাদেশ (৩৪.৪ ওভারে ৪/১৫৮)।
ধর্মশালায় ওয়ানডেতে পেসাররা তোপ দাগবেন পরিসংখ্যান বলছিল তেমনটাই। কিন্তু সাকিব ও মিরাজ যেন সেই নিয়ম বদলে দিতে নামেন। এই দুই অভিজ্ঞ স্পিনারের জাদুতে আগে ব্যাটিংয়ে নাকাল হয়েছেন আফগানিস্তানের ব্যাটাররা। ২ উইকেটে ১১২ রানে পৌঁছে যাওয়া আফগানিস্তান শেষ ৮ উইকেট হারাল মাত্র ৪৪ রানে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে সাকিবের পরিসংখ্যান সব সময়ই দারুণ। তাদের বিপক্ষে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও এই বাঁহাতি স্পিনারের। দুই প্রস্তুতি ম্যাচ না খেললেও মূল লড়াইয়ের প্রথম ম্যাচে ৮ ওভারে ৩০ রান দিয়ে উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ৯ ওভারে মাত্র ২৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়েছেন মিরাজ।
আফগানিস্তানের দুই ওপেনার রহমানউল্লাহ গুরবাজ ও ইব্রাহিম জাদরান শুরুটা করেছিলেন ভালো। প্রথম ৮ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে করে ৪৭ রান। ৯ম ওভারে ব্রেকথ্রু এনে দেন সাকিব। ওভারের দ্বিতীয় বলে স্লগ সুইপ করেন ইব্রাহিম, ডিপ স্কয়ার লেগ থেকে দৌড়ে এসে ক্যাচ ধরেন তানজিদ হাসান তামিম। ২৫ বলে ২২ রান করেন এই ওপেনার।
৩ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামা রহমত শাহকে নিয়ে আরও একটি বড় জুটি গড়ার পথে এগোতে থাকেন গুরবাজ। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হতে দেননি সাকিব। ১৬তম ওভারের প্রথম বলে সুইপ করতে যান রহমত। টপ এজ হওয়া বল মিড অফে সহজে লুফে নেন লিটন দাস। ২৫ বলে ১৮ রান করেন রহমত। দ্বিতীয় উইকেটে রহমত-গুরবাজের জুটিতে আসে ৪১ বলে ৩৬ রান।
তৃতীয় উইকেটে গুরবাজ ও হাশমতউল্লাহ শাহিদি ২৯ রানের একটি জুটি গড়েন। এরপরই খেই হারায় আফগান ব্যাটিং অর্ডার। ৬২ বলে ৪৭ রানের সর্বোচ্চ ইনিংসটি খেলেছেন গুরবাজ। বাংলাদেশের পেসারদের মধ্যে শরীফুল ইসলাম নিয়েছেন দুটি উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।