December 27, 2024, 1:04 am
সর্বশেষ:
কুমিল্লা মেঘনার বৈদ্ধনাথপুরে ঢাকা বনাম চট্রগ্রাম বিভাগ কুস্তি খেলা ৯ জানুয়ারি মেঘনায় মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভে বিএনপির দুই গ্রুপের আলাদা শ্রদ্ধাঞ্জলি  মেঘনায় যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন মেঘনায় শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত প্রশাসনের প্রতিটি সেক্টরে আওয়ামীলীগের দুসর : অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া মেঘনার মাটি- মোশাররফ স্যারের ঘাটি শ্লোগানে মুখরিত মানিকার চর বাজার দৌলত হোসেন সরকারি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত গাছে ফেস্টুন লাগানোর দায়ে ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে জরিমানা: ২৪ ঘন্টায় সকল ফেস্টুন সরানোর নির্দেশ বিগত ১৫ বছরে ভারতের সাথে যত চুক্তি হয়েছে তা বাতিল করতে হবে : অধ্যক্ষ সেলিম ভুইয়া মেঘনায় জনাকীর্ণ সেতু নির্মাণের আশায় দেড় যুগ!

প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার

৭ অক্টোবর ২০২৩ ইং, বিন্দুবাংলা টিভি ডটকম, 

রাবেয়া আক্তার :

প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য হচ্ছে, শিশুর শারিরীক, মানসিক, সামাজিক, নৈতিক, মানবিক, নান্দনিক, আধ্যাত্মিক ও আবেগিক বিকাশ সাধন এবং তাদের দেশাত্মবোধে, বিজ্ঞানমনস্কতায়, সৃজনশীলতায় ও উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করা।

প্রাথমিক শিক্ষার উক্ত লক্ষ্য পূরণে আইসিটি হতে পারে অন্যতম সহায়ক। আইসিটিকে পাশ কাটিয়ে বা অবহেলা করে আধুনিক বা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিত সম্ভব নয়।

বর্তমান যুগ আইসিটির যুগ। সারা বিশ্বব্যাপি আইসিটি ব্যবহারের ক্ষেত্র দিন দিন সম্প্রসারিত হচ্ছে। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিতে আইসিটির ভূমিকা অনস্বীকার্য। তাই, প্রাথমিক শিক্ষায় শতভাগ আইসিটির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি।

বর্তমান সময়ে আইসিটির এই গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তাকে প্রাধান্য দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিতে সরকার নানা পদক্ষেপ ও কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করছে।

প্রাথমিক শিক্ষার উদ্দেশ্যের মধ্যেও পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষভাবে আইসিটি ব্যবহারের গুরুত্ব সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে। যেমন, বলা হয়েছে, বিজ্ঞানের নীতি-পদ্ধতি ও প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জন, সমস্যা সমাধানে এর ব্যবহার এবং বিজ্ঞানমনস্কতায় ও অনুসন্ধিৎসু করে গড়ে তুলতে সহায়তা করা এবং ভাষা ও যোগাযোগ দক্ষতার বিকাশ এবং নিজেকে প্রকাশ করতে সহায়তা করা। কাজেই, মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতে আইসিটি ব্যবহারের গুরুত্ব অপরিসীম।

প্রাথমিক শিক্ষা হচ্ছে আনুষ্ঠানিক শিক্ষার প্রথম ধাপ। এই ধাপের শিক্ষার্থীদের বয়স ৫-১০ বছর। এই বয়সের শিক্ষার্থীদের নিয়ে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করাটা একটু কষ্টকর। কারণ, শ্রেণিকক্ষে একটানা বেশিক্ষণ তাদের মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টসাধ্য। শিশু শিক্ষার্থীদের একঘেয়েমি দূর করতে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পাঠ উপস্থাপন হতে পারে অন্যতম ভালো উপায়। এর মাধ্যমে পাঠদান করলে পাঠ হয় আনন্দদায়ক, স্থায়ী এবং আকর্ষনীয়।
প্রাথমিক শিক্ষার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সফল বাস্তবায়ন নির্ভর করে শ্রেণি কার্যক্রম মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে কিনা তার উপর। তাই, উন্নত বিশ্বের সাথে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই আইসিটির ব্যবহার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর একযোগে কাজ করছে।

এরই ধারাবাহিকতায়, গত এক দশকে আমাদের প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহার এ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। শিক্ষাক্ষেত্রে আইসিটির ব্যবহার যে শিক্ষাকে টেকসই এবং মানসম্মত পর্যায়ে পৌঁছায় এটাই তার আদর্শ প্ৰমাণ।

আইসিটি যেমন আমাদের জীবনমান উন্নত করছে, তেমনি আমাদের শিক্ষার্থীদের আধুনিক বিশ্বের যোগ্য ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলতে সাহায্য করছে।

বিশ্ব নেতারা বর্তমান পৃথিবীকে গ্লোবাল ভিলেজ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। যুগটাকে ঘোষণা দিয়েছেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগ হিসেবে। তথ্য প্রযুক্তিতে অগ্রগতিই এখন একটি দেশের উন্নতির মানদন্ড হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

ল্যাপটপ, কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট ইত্যাদি আইসিটি পন্যের উদ্ভাবন মানব সভ্যতাকে পৌঁছে দিয়েছে। এক অনন্য উচ্চতায়। তাই, একজন শিক্ষার্থীকে তার শিক্ষা জীবনের প্রথম থেকেই এসব প্রযুক্তির সাথে পরিচয় ঘটানো ব্যতিত স্মার্ট শিক্ষা ব্যবস্থা বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়।

গবেষণায় প্রমাণিত, শিক্ষার্থীর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, শিখন আগ্রহ এবং প্রমিত উচ্চারণ ও পড়ার আগ্রহ তৈরিতে মাল্টিমিডিয়া অভাবনীয় ভূমিকা রাখছে।

যেসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম রয়েছে, সেসব বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা

হয়। এসব বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির হার উল্লেখযোগ্য কম, ঝরে পড়ার হার কম, মুখস্থ বিদ্যার প্রবণতা কম, শিশুরা প্রফুল্লমনে বিদ্যালয়ে যায় এবং নির্ধারিত সময় পর্যন্ত বিদ্যালয়ে অবস্থান করে, আনন্দের সাথে শ্রেণি কার্যক্রমে

অংশগ্রহন করে। সর্বোপরি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মাণের যে স্বপ্ন দেখছেন, সেই কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছানোর জন্য স্মার্ট প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের কোনো বিকল্প নেই।

অনেক সময়ই শিশুরা এমন কিছু তথ্য জানতে চায়, যা একজন শিক্ষকের আয়ত্বে সব সময় নাও থাকতে পারে, অথবা শ্রেণি কার্যক্রমে ছবি বা ভিডিও দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে। প্রযুক্তির আশির্বাদে গুগলে বা ইউটিউবে সার্চ দিয়ে মূহুর্তেই সেই তথ্য সংগ্রহ, ছবি বা ভিডিও ডাউনলোড করে প্রদর্শন করা যায়।

মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করে পাঠদানে সুবিধা অনেক। সময় ও অর্থ ব্যয় করে উপকরন তৈরি করতে হয়না, দীর্ঘ সময় ব্যয় করে পাঠ পরিকল্পনা তৈরি করতে হয়না, সহজেই যে কোনো পদ্ধতি বা কৌশল প্রয়োগ করে সুন্দর ও আকর্ষনীয় করে পাঠদান করা যায়।

প্রযুক্তি নির্ভর এই যুগে, শিক্ষায় আইসিটির ব্যবহারের গুরুত্ব অনুধাবন করে বাংলাদেশ সরকার নানামুখি কর্মকান্ড হাতে নিয়েছে। সকল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহন করা হয়েছে। শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরিতে দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে, প্রতিটি বিদ্যালয়ে ল্যাপটপ, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম সরবরাহ করা হচ্ছে।

একবিংশ শতকের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায়, স্মার্ট নাগরিক এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে, প্রাথমিক শিক্ষায় আইসিটি ব্যবহারের উদ্যোগ চলমান রাখা এবং জোরদার করার বিকল্প নেই।

 

লেখক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, মেঘনা, কুমিল্লা।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য করুন


ফেসবুকে আমরা