মো.মাসুম মিঞা :
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সুপ্ত সৃজনশীলতা জাগিয়ে তোলা। পাশাপাশি গবেষক, বিজ্ঞানী, লেখক, বুদ্ধিজীবী এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার উপযোগী গ্রাজুয়েট তৈরি করা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যসূচিতে ব্যবহারিক বিষয় বেশি বেশি করে অন্তর্ভুক্ত করা। ক্রিটীক্যাল থিংকিং এবং প্রবলেম সলভিং ক্ষমতা যাতে আন্তর্যাতিক মানের হয় সেদিকটা নিশ্চিত করা। দুঃখের বিষয় হচেছ আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলোর টপ এবং মিড-লেভেলের কর্মকর্তাগুলো সব প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা আমদের দেশ থেকে বিদেশে চলে যায়। এইখানে একটা বড় শুন্যত তৈরি হয়েছে। এই শূন্যতা পূরণ করার দায়িত্ব মূলত আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর। এই শূন্যতা পূরণ করতে পারলে একদিকে যেমন কর্মসংস্থান তৈরি হবে, বেকারত্ব দূর হবে। পাশাপাশি হাজার হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় হবে। আবার পড়াশোনার মান আন্তর্জাতিক মানের করতে পারলে আমাদের শিক্ষার্থীরা পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাবে। ফলে তারা আন্তর্জাতিক মানের বিজ্ঞানী, গবেষক, আইনজীবী বা পলিসি মেকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনে কাজ করার সুযোগ পাবে। এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হওয়ার পাশাপাশি দেশের ব্রান্ডিং ও সম্মান তৈরি হবে। এখানে গুগুলে বাংলাদেশের প্রথম প্রকৌশলি জাহিদ সবুরের কথা উল্লেখ্য। সার্চ ইঞ্জিন গুগল এখন পৃথিবীর সেরা একটি কোম্পানী।
গুগলের অন্যতম সার্ভিস হচ্ছে ইউটিউব। এছাড়া গুগল ড্রাইভ, গুগল ক্লাউডসহ অনেকগুলো সার্ভিস নিয়ে গুগল এখন একটি টেক সাম্রাজ্য। গুগলের মত প্রতিষ্ঠানে একজন প্রকৌশলি হিসেবে কাজ করতে পারা শুধু জাহিদ সবুরের নিজের জন্য নয়, দেশের জন্য অনেক সম্মানের বিষয়। গুগলের পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুক, টুইটার, ইনস্ট্যাগ্রাম, লিংকডইন, এডোবি, ক্যানভাসহ টেকজায়ান্টগুলো তাদের কর্মীদের বেতন বাবদ বছরে কয়েক মিলিয়ন ইউএস ডলার দিয়ে থাকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব হচ্ছে এরকম জাহিদ সবুর তৈরি করা। এজন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম হাতে নেয়া, সিলেবাস প্রণয়ণ করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে বড় ধরণের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এখন শুধু সময়ের দাবি।
আবার একটি ভালো কলেজের দায়িত্ব হচ্ছে তার শিক্ষার্থীদেরকে এমন ভাবে প্রস্তুত করা যাতে তার শিক্ষার্থীরা তাদের ভিতরকার সৃজনশীলতা জাগিয়ে তোলার পাশাপাশি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারে। প্রয়োজনে আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস প্রণয়ন করতে হবে। শিক্ষার্থীদেরকে কারিগরি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলতে হবে। অদেরকে কনভার্সেশনাল ইংরেজি শিক্ষায় দক্ষ করে তোলা যেন একজন শিক্ষার্থী দেশে অথাবা বিদেশে যেখানেই কাজ করতে যাবে, সে যেন তার যোগ্যতা এবং দক্ষতা দিয়ে শক্ত অবস্থান তৈরি করতে পারে। প্রতিযোগিতায় যেন সে এগিয়ে থাকে।
আবার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দায়িত্ব হওয়া উচিত তার শিক্ষার্থীদের এমনভাবে তৈরি করা যাতে তারা ভালো কলেজে ভর্তি হতে পারে। পাশাপাশি ইংরেজিতে দক্ষ হয়ে ইংরেজি ও প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ করে কম্পিউটার ব্যবহারে দক্ষ হয়ে উঠতে পারে যাতে, কোনো শিক্ষার্থী প্রবাসী হিসেবে বিদেশে গমন করলে সেখানে সর্বোচ্চ সম্মান ও সম্মানী পেতে পারে। আবার প্রাথমিক বিদ্যালয় দায়িত্ব হচ্ছে তার শিক্ষার্থীদের মাঝে মৌলিক শিক্ষার বিস্তার ও প্রসার ঘটানো।
উপযুক্ত চার স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হচ্ছে লেখাপড়া করানোর পাশাপাশি তাদেরকে সুনাগরিক হিসেবে তৈরি করা। দেশের প্রতি, মা- বাবার প্রতি সমাজের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্যগুলো শেখানো এবং সেগুলোর অনুশীলন করা। তাদের মধ্যে মানবিকতাবোধ এবং শ্রদ্ধাবোধ তৈরি করা। তাদেরকে ভালো-মন্দ, উচিত অনুচিত বুঝিয়ে দেয়া। অবশ্য এজন্য প্রথমে সব স্তরের শিক্ষকবৃন্দকে উল্লেখিত গুণে গুণান্বিত হতে হবে।
আসলে একটি এলাকা বা জাতির উন্নতির জন্য শিক্ষায় বিনিয়োগের কোন বিকল্প নেই। বেশি বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরি করা গেলে এবং এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঝে প্রতিযোগিতা তৈরি করা গেলে একদিকে মান মানসম্মত শিক্ষা প্রদান করা নিশ্চিত হবে পাশাপাশি যারা শিক্ষা গ্রহণ করবে তাদের উপকার হবে সবচেয়ে বেশি। প্রকৃত উন্নয়ন হবে মেঘনা তথা সর্বস্তরের জনগণের এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের।
বর্তমানে আমাদের মেঘনা উপজেলায় এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বড় অভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই অভাব পূরণ করার জন্য উদ্যোক্তা, বিনিয়োগকারী ও সচেতন ব্যক্তিবর্গ এগিয়ে আসবেন কি?
লেখক, নিজস্ব প্রতিবেদক- মাসিক বনফুল, প্রভাষক ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।