ইঞ্জিনিয়ার রফিকুল ইসলাম।।
দেশের অন্যান্য জেলার চেয়ে অনেকাংশে এগিয়ে কুমিল্লা। ঐতিহাসিক ভাবে কুমিল্লা বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা!শিক্ষা, চাকুরী, ফরেন র্যামিটেন্স, প্রাকৃতিক গ্যাস, ভৌগলিক অবস্থান, রাজনৈতিক নেতৃত্ব, কৃষি, ঐতিহ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে কুমিল্লা প্রথম সারিতে আছে।বিগত সরকারের দেড় দশকে দেশী, বিদেশী ঋণে লুটপাটের পর বেশ কিছু উন্নয়ন হয়েছে। অতি চড়া মূল্যের এ উন্নয়নে যে পরিমান ঋণ করা হয়েছে তার ভাগ দেশের সকল জনগণের উপর সমানভাবে বর্তিয়েছে। কিন্তু গত শাসনামলে কুমিল্লায় কোন দৃশ্যমান উন্নয়ন হয় নাই।জাতীয় প্রয়োজনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দাউদকান্দি থেকে চৌদ্দগ্রাম পর্যন্ত ফোরলেন বা সিক্সলেন হয়েছে!
কিন্তু উপজেলা সমূহের আভ্যন্তরীণ সড়ক অবকাঠামোর তেমন কোন পরিবর্তন হয় নাই! বাৎসরিক রুটিন ওয়ার্কের অধীনে যতটুকু হওয়ার ঠিক ততটুকুই হয়েছে। এতেও ছিল দুর্নীতি, লুটপাট, দলীয় লোকদের একচ্ছত্র আধিপত্য!ঢাকা-কুমিল্লা বাইপাস রেলপথ করতে পারলে প্রায় ১০০ কিমি দূরত্ব কমানো যেত ঢাকা-চট্টগ্রামের রেলপথ !ভাটেরচর থেকে মুরাদনগরের কোম্পানিগঞ্জ পর্যন্ত জাতীয় মানের সড়কপথ তৈরি করা গেলে ৮/৯ টি উপজেলার সহজ যাতায়াত ব্যবস্থা তৈরি হতে পারত।কুমিল্লা বিভাগ বাস্তবায়নের দাবী দীর্ঘদিনের। অথচ আলোর মুখ দেখেনি কুমিল্লা বিভাগ! বিভাগের নাম নিয়ে তিনি কুমিল্লাবাসীকে হেয় প্রতিপন্ন করেছেন নানা সময়ে।একটি প্রশাসনিক জেলাও ছিল সময়ের দাবী। দাউদকান্দি বা তিতাসে একটি জেলা হলে এ অঞ্চলের ৬/৭ টি উপজেলার জনসাধারণ উপকৃত হতো।বাখরাবাদের গ্যাস ব্যবহার করে শিল্পকারখানা স্থাপন করলে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হতো।যাতায়াত ব্যবস্থা নাজুক থাকার কারণে কোন ভাল মানের মেডিক্যাল স্থাপন হয় নাই।কারিগরি বা উচ্চশিক্ষার কোন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে নাই উত্তর কুমিল্লায়!কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ২০০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছ।র্যামিটেন্সের সুষ্ঠু বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করতে পারলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হতো।পাবনার ঢালারচর-মাঝগ্রাম রেলপথ তৈরি হয়েছে পৌনে দুইহাজার কোটি টাকায়! সারাদিনে ট্রেন চলে মাত্র একটি।অষ্টগ্রাম-মিঠামইন দুই উপজেলার সংযোগের জন্য ৭৫০ কোটি টাকায় হাওড়ের উপর অল ওয়েদার প্রুফ সড়ক নির্মাণ হয়েছে! যোগাযোগ শুধু দুই উপজেলায়। এখন আলপনা আঁকায় কাজে লাগছে। সারাদিনে গুটিকয়েক গাড়ি চলে।গোপালগঞ্জে কয়েক হাজার কোটি টাকায় রেলপথ হয়েছে। সেখানেও ট্রেন চলে একটি। গোপালগঞ্জে হয় নাই এমন কিছু নাই!দক্ষিণ-পূর্বের শেষ জেলা কক্সবাজার। পর্যটন শিল্প ছাড়া তেমন কোন শ্রমঘন এলাকা নয়। সেখানে রেলপথ হয়েছে, সড়ক ও বিমান পথ আগেই আছে।টানেল হয়েছে কক্সবাজার, বান্দরবন যাতায়াত সহজ করার জন্য! গাড়ির সংখ্যা কম! তাই ঋণের টাকা পরিশোধে অন্যখাতে হাত দিতে হবে।বাড়তি খরচের দৃষ্টিনন্দন কালনী ব্রীজ হয়েছে গোপালগঞ্জ – নড়াইল সড়কে।দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে ঋণের টাকায় অনেক অপ্রয়োজনীয় উন্নয়ন হয়েছে এ সময়ে।অথচ কাঁচপুর টু বাউশিয়া অংশ ঢাকা-চট্টগ্রাম রাস্তা পাকিস্তান আমলের মতই রয়ে গেছে।শুধু একজন মানুষের প্রতিহিংসার কারণে কুমিল্লা বঞ্চিত রয়েছে দেড়যুগ ধরে।কুমিল্লার সাবেক এমপি বাহারের সাথে ভিডিও কলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুমিল্লার প্রতি তার যে ঘৃণা এবং ক্ষোভ দেখিয়েছেন তাতে তার প্রধানমন্ত্রী পদের শপথ ভঙ্গের বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।কুমিল্লার আওয়ামী নেতৃবৃন্দ কী জবাব দিবেন?বৈষম্যের শিকার কুমিল্লা টিকে আছে নিজের স্বকীয়তায়!তবে জাতীয় ঋণের বোঝা সমহারে বইতে হবে।সকল বৈষম্যের অবসান হোক।
লেখক – প্রকৌশলী