ডেস্ক রিপোর্ট।।
কুমিল্লার দেবিদ্বারে বিয়ের জন্য চাপ দেওয়ায় গৃহবধূ শাহনাজ বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তারই প্রেমিক মহিউদ্দিন। সোমবার বিকালে মহিউদ্দিন কুমিল্লার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। দেবিদ্বার থানার ওসি শামছুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ইউসুফপুর এলাকার একটি কালভার্টের নিচ থেকে শাহনাজ বেগমের লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রথমে তার পরিচয় জানা না গেলেও পরে জানা যায়, তিনি মুরাদনগর উপজেলার বাখরনগর এলাকার শাহ আলমের স্ত্রী। পুলিশ ইতিমধ্যেই এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করেছে।
পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, শাহনাজের স্বামী দীর্ঘদিন ধরে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। এই সুযোগে মহিউদ্দিন (৩৫) নামের এক বাসচালকের সাথে শাহনাজের পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্কের জের ধরে শাহনাজ মহিউদ্দিনকে বিয়ের জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয় এবং একপর্যায়ে মহিউদ্দিন ক্ষুব্ধ হয়ে শাহনাজকে মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে শ্বাসরোধে হত্যা করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাহনাজ মহিউদ্দিনকে দ্রুত বিয়ে না করলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন। গত ৫ মার্চ রাতে মহিউদ্দিন শাহনাজকে মুরাদনগর উপজেলার কোম্পানীগঞ্জ বাজারে ডেকে নিয়ে যান এবং নিজের বাসে তুলে নেন। বাসের ভেতরেই বিয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে তর্ক ও হাতাহাতি হয়। পরে মহিউদ্দিন শাহনাজকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের গোপালনগর গ্যাস ফিল্ড সংলগ্ন এলাকায় নিয়ে গিয়ে তার মাথায় আঘাত করেন, যার ফলে শাহনাজ অচেতন হয়ে পড়েন। এরপর মহিউদ্দিন শাহনাজের শাড়ি দিয়ে তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। রাত সাড়ে ১২টার দিকে মহিউদ্দিন শাহনাজের হাত-পা বেঁধে ইউছুফপুর সেতুর নিচে লাশ ফেলে চলে যান।
তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় রোববার বিকালে কোম্পানীগঞ্জ বাজার এলাকা থেকে মহিউদ্দিনকে আটক করে দেবিদ্বার থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে নিহত নারীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোনও জব্দ করা হয়।
হত্যাকাণ্ডের পরদিন, অর্থাৎ ৬ মার্চ, মহিউদ্দিন রক্তমাখা বাসটি ধুয়ে পরিষ্কার করে হত্যার আলামত নষ্ট করেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেন তার হেলপার আবদুস সাত্তার। রোববার সন্ধ্যায় র্যাব-১১ আবদুস সাত্তারকে আটক করে এবং পরে তাকে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
দেবিদ্বার থানার ওসি শামসুদ্দিন মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন, “ইউছুফপুর এলাকা থেকে অজ্ঞাত নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তার ছবি দেখে পরিচয় শনাক্ত করা হয়। এই ঘটনায় ৭ মার্চ নিহত নারীর বড় ছেলে বাদী হয়ে থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি ছিল ক্লুলেস। পরবর্তীতে তদন্তের মাধ্যমে মূল আসামি ও তার সহযোগীকে গ্রেফতার করা হয়।”
ওসি আরও জানান, “দুই আসামির মধ্যে মহিউদ্দিন কুমিল্লার জ্যৈষ্ঠ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের ৪ নম্বর আমলি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। সেখানে তিনি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়েছেন। পরে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।”