বিপ্লব সিকদার :
বাংলা প্রবাদ “চোরের মায়ের বড় গলা” আমাদের সমাজের এক গভীর বাস্তবতাকে তুলে ধরে। একজন অপরাধীর পক্ষ নিয়ে যখন তার ঘনিষ্ঠজন বা সহানুভূতিশীল কেউ অধিক আওয়াজ তোলে, তখন তা কেবল অপরাধ ঢাকার চেষ্টা নয়, বরং সমাজকে বিভ্রান্ত করার কৌশলও বটে। এই প্রবণতা সমাজে কী ভয়াবহ প্রভাব ফেলে, তা এখন দিনদিন স্পষ্ট হচ্ছে।
আজকাল দেখা যায়—যেখানে অন্যায় হয়, সেখানেই অন্যায়ের পক্ষ নিয়ে বড় গলা করা হয়। দুর্নীতিগ্রস্ত, ক্ষমতাবান কিংবা সন্ত্রাসী চরিত্রের লোকদের আত্মীয় বা সমর্থকেরা এমনভাবে তার পক্ষ নেয়, যেন অপরাধী নয় বরং সে-ই নির্যাতিত। অভিযোগ উঠলে সেটিকে ‘ষড়যন্ত্র’ বলা হয়, তদন্ত শুরুর আগেই বিচারকের মতো অপরাধ অস্বীকার করা হয়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, মিছিল-মিটিং কিংবা মিডিয়া—সব জায়গায় তাদের “বড় গলা” সমাজের বিবেককে প্রভাবিত করতে থাকে।
এই বড় গলার কিছু বড় ক্ষতি হচ্ছে:
অপরাধীর সাহস বাড়ে
যখন অপরাধীর মা, ভাই, আত্মীয় কিংবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষক বড় গলায় চিৎকার করে, তখন আসল অপরাধী আত্মবিশ্বাস পায়—সে ভাবে, সমাজের কেউ তার কিছু করতে পারবে না। এটা ভবিষ্যৎ অপরাধকেও উৎসাহিত করে।
বিচারপ্রক্রিয়া প্রভাবিত হয়
বড় গলার কারণে তদন্ত প্রভাবিত হয়। প্রভাবশালীরা মিডিয়াকে ব্যবহারের চেষ্টা করে, পুলিশ প্রশাসনকে চাপে ফেলে। এতে নিরপেক্ষ বিচার ব্যাহত হয়।
ভুক্তভোগী নিরুৎসাহিত হয়
অপরাধের শিকার হওয়া মানুষটি যখন দেখে অপরাধীর পক্ষেই সমাজ জোরালো আওয়াজ তুলছে, তখন সে বিচারের আশায় নিরুৎসাহিত হয়। একসময় সে চুপ হয়ে যায়—আর সমাজ হারায় এক ন্যায়ের সাক্ষ্য।
সমাজে ভুল বার্তা যায়
যদি বড় গলা দিয়েই অপরাধ ঢেকে ফেলা যায়, তাহলে সাধারণ মানুষ মনে করে—সত্য নয়, জোরই সব। এতে নৈতিক অবক্ষয় ঘটে, সমাজে মেরুদণ্ডহীনতার বিস্তার হয়।
সমাধান কী?
১. সচেতন নাগরিকদের প্রতিবাদ জরুরি।
২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে দিতে হবে—কোনো চাপ না মেনে।
৩. সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা দরকার সত্যকে তুলে ধরতে।
৪. মিডিয়া ট্রায়াল নয়, প্রমাণভিত্তিক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
শেষ কথা, “চোরের মায়ের বড় গলা” যেন সত্যকে ঢেকে না ফেলে, বরং তার আওয়াজের নিচে চাপা পড়ে থাকা সত্যগুলো সমাজ টেনে তুলে আনতে শিখুক। ন্যায় ও সাহসিকতাই হোক নতুন প্রজন্মের ভাষা।
লেখক -সাংবাদিক, রাজনীতিক।