বিপ্লব সিকদার :
সমাজে কিছু মানুষ থাকে, যাদের চেহারা এক কিন্তু চরিত্র বহু রঙে রঞ্জিত। এরা এক হাতে ধর্মের কথা বলে, আরেক হাতে দুর্নীতি করে। এক পা রাজনীতির মঞ্চে, আরেক পা চোরাচালানের দুনিয়ায়। এদেরকে বোঝা যায় না মুখে, ধরা যায় না হাতে—তারা যেন এক ব্যক্তিতে বারো হাত নিয়ে সমাজের সর্বস্তরে ছড়ানো এক রহস্যময় গিরগিটি।
এই ‘বারো হাতওয়ালা’ ব্যক্তি কখনো প্রশাসনের ঘনিষ্ঠ, আবার কখনো বিরোধী দলের কৌশলী পরামর্শদাতা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটিতে তার হাত, আবার ঠিকাদারি সিন্ডিকেটেও তার নাম। কখনো সে সমাজসেবক সেজে দরিদ্রের পাশে, আবার অন্ধকারে দুর্বৃত্তদের সঙ্গে চায়ের আড্ডায়।
তার এক হাতে দান, আরেক হাতে দখল। একদিকে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা, অন্যদিকে মদের আসরে গোপন বিনিয়োগ। সে শিক্ষিত সমাজে বুদ্ধিজীবী, আবার নিরক্ষর সমাজে প্রভাবশালী নেতা। তার কোনো একক রঙ নেই—যার প্রয়োজন, তার সামনে সে সেই রঙেই নিজেকে মেলে ধরে। এ এক খোলস পাল্টানো জীবন, যেখানে সত্যের চেয়ে অভিনয় বেশি জরুরি।
এদের চেনা যায় কেবল তখনই, যখন সমাজ সচেতন হয়। যখন মানুষ প্রশ্ন তোলে—“কীভাবে এক ব্যক্তি এত জায়গায় এত ক্ষমতা ফলায়?” তখনই ফাঁস হয় সেই গিরগিটির বারো হাতের রহস্য।
এইসব ‘বহুমুখী’ মানুষদের বিষয়ে সমাজকে সতর্ক হওয়া উচিত। কারণ, যারা প্রতিটি ক্ষেত্রকে নিজের স্বার্থে ব্যবহার করে, তারা কখনোই প্রকৃত সমাজহিতৈষী হতে পারে না। তারা মুখোশধারী—যাদের এক হাতে করুণা, আরেক হাতে কালো থাবা।
সমাজে যদি এমন ‘বারো হাতওয়ালা গিরগিটি’র বিচরণ চলতেই থাকে, তবে সত্য আর ভণ্ডামির ফারাক ঘুচে যাবে। তাই সময় এসেছে—প্রতিটি মুখোশ উন্মোচনের, প্রতিটি হাতের গন্তব্য জানার।