বিপ্লব সিকদার :
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুল অদুদ মুন্সির একটি পুরনো ভিডিও ফের ভাইরাল হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি সরাসরি আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও প্রতীক ‘নৌকা’র পক্ষে ভোট চাইছেন। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায় উপজেলা বিএনপিতে দেখা দিয়েছে চরম অস্বস্তি, বিব্রততা এবং ক্ষোভ।
২০১৮ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের সময়ের এই ভিডিওতে আব্দুল অদুদ মুন্সিকে বলতে শোনা যায়—
“বাঘা বাঘা রাজনীতিবিদকে পিছনে ফেলে রতন শিকদার নৌকা প্রতীক নিয়ে আসায় আমি তাকে ধন্যবাদ জানাই। লুটের চর ইউনিয়নের চারটি কেন্দ্রে যেন একটি ভোটও অন্য কোনো প্রতীকে না পড়ে—সবাই দেখে দেখে নৌকায় ভোট দেবেন।”
উল্লেখ্য, ভিডিওটিতে মঞ্চে ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল্লাহ মিয়া রতন শিকদারও, যিনি সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গাফফার।
এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতারা। দলটির একাধিক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
অদুদ মুন্সি তখন দলের সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক ছিলেন, বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হয়েছেন আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট চাওয়া দলীয় আদর্শ ও শৃঙ্খলার চরম লঙ্ঘন অথচ তাঁর বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।”
এ বিষয়ে বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল মতিন বলেন, দল করে সরাসরি নৌকা প্রতীকের পক্ষে ভোট চাওয়া এটা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থী।উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম বলেন,“দায়িত্বশীল পদে থেকে এমন বক্তব্য রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাব। দলকে বিব্রত করলেই ব্যাখ্যার সুযোগ থাকে না।”উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজহারুল হক শাহিন বলেন,
“বিএনপি ১৭ বছর ধরে আওয়ামী দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছে নেতাকর্মীরা তাদের অত্যাচারে ঘরে ঘুমাতে পারেনি, জেল, জুলুমের শিকার হয়েছে । সেখানে দলের একজন দায়িত্বশীল নেতা হয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং নৌকার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালানো আমাদের ত্যাগ ও সংগ্রামের অবমূল্যায়ন।এবং দলের সাংগঠনিক নিয়ম বহির্ভূত।
বিষয়টি নিয়ে আব্দুল অদুদ মুন্সি বলেন
২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। রতন শিকদার আমার ভাগিনা এবং আমার প্রতিষ্ঠিত শেখের গাঁও আব্দুল অদুদ মুন্সি স্কুল এমপিওভুক্ত করতে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন। সেই কৃতজ্ঞতা থেকেই আমি একটি সভায় অংশ নিই। এটি দলীয় অবস্থান থেকে নয়, ব্যক্তিগত সম্পর্কের জায়গা থেকে।”
তবে নেতার এমন ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন স্থানীয় ত্যাগী নেতারা। তাদের অভিযোগ, এই ব্যাখ্যা রাজনৈতিক দায় এড়ানোর অপচেষ্টা মাত্র। একজন দলীয় নেতা হয়ে প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান গ্রহণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এ ঘটনায় মেঘনা উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরে নতুন করে বিভক্তি, হতাশা ও নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দলের দায়িত্বশীলরা বলছেন, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এটি দলের সার্বিক ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।