July 25, 2025, 11:24 pm
সর্বশেষ:
মেঘনায় এসএসসির প্রশংসাপত্রে স্কুলের টাকা আদায় : প্রধান শিক্ষকের স্বীকারোক্তি ১৫ জেলায় ৩ ফুট জলোচ্ছ্বাসের শঙ্কা শুভাকাঙ্ক্ষীদের সুমতি—উন্নতির পথে অদৃশ্য শক্তি মেঘনায় বিএনপির দ্বন্দ্ব নিরসনে হাইকমান্ডের উদাসীনতায় ভিন্ন দলগুলোর পোয়াবারো মেঘনা ‘দূর্গম’ কেন—পুনর্মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি মেঘনায় খাস জমি, হালট ও খাল উদ্ধারে প্রশাসনের জোরালো ভূমিকা দরকার মেঘনায় টেকসই উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ: বেলে মাটি, অনিয়ম ও ভাঙনের গল্প শিক্ষা সবার জন্য—টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি দুদকের নতুন সচিব খালেদ রহীম মেঘনায় বিএনপির ৩১ দফা নারীদের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে: নেতৃত্বে চাই ছাত্রী-নারী সক্রিয়তা

শিক্ষা সবার জন্য—টেকসই উন্নয়নের ভিত্তি

বিপ্লব সিকদার।। 

একটি জাতি তখনই টেকসই উন্নয়নের পথে এগিয়ে যেতে পারে, যখন সেই উন্নয়ন কেবল শহুরে উচ্চবিত্ত শ্রেণির গণ্ডিতে সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজের প্রান্তিক, দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকেও অন্তর্ভুক্ত করে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গ্রাফ উর্ধ্বমুখী হলেও যদি সমাজের এক বিশাল জনগোষ্ঠী শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও ন্যায্য সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকে—তবে সেই উন্নয়ন কখনোই স্থায়ী বা টেকসই হতে পারে না। এ ধরনের ‘দৃষ্টিনন্দন বৈষম্য’ শুধু মানবিক সংকটই নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদে জাতির ভবিষ্যতের জন্য ভয়ংকর হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

আমাদের দেশের বাস্তবতাই ধরুন। রাজধানীসহ বড় শহরগুলোতে উচ্চমানের স্কুল, আধুনিক সুযোগ-সুবিধা, ইংরেজিমাধ্যম শিক্ষা ও প্রযুক্তি নির্ভরতা ক্রমাগত বাড়ছে। অপরদিকে, দূরবর্তী গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলে এখনো অনেক শিশু বিদ্যালয় মুখো হতে পারে না; কেউ হয়তো পরিবারে সহায়তা করতে গিয়ে স্কুল ছেড়ে দেয়, কেউবা অর্থাভাবে বই-খাতা জোটাতে পারে না। পাহাড়ি এলাকা, হাওরাঞ্চল, চরাঞ্চল কিংবা উপকূলীয় অঞ্চলের অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজও অবকাঠামোগত ও মানবসম্পদ সংকটে জর্জরিত।

এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠে—শুধু একটি অংশের জন্য উন্নয়ন হলে কি জাতি সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যাবে? উত্তর সবারই জানা। কারণ শিক্ষা হলো সেই মৌলিক হাতিয়ার, যা একজন মানুষকে শুধু কর্মক্ষমই নয়, সচেতন, মানবিক ও দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলে। যে জাতি তার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মধ্যে সমতা ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে শিক্ষা পৌঁছে দিতে ব্যর্থ, সে জাতির উন্নয়ন অনেকটাই কাঁচের দেয়ালে দাঁড় করানো ভবনের মতো—যা যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে।

আমাদের সংবিধান শিক্ষাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু সেই স্বীকৃতি যদি কাগজে সীমাবদ্ধ থাকে, আর বাস্তবতায় তার প্রতিফলন না ঘটে—তাহলে সেটা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা হিসেবেই বিবেচিত হবে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সন্তানদের শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এটি শুধু মানবিক অবিচার নয়, রাষ্ট্রীয় দায়িত্বে অবহেলা।

শুধু প্রাথমিক শিক্ষা নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে আরও বড় সংকট বিদ্যমান। মানসম্পন্ন শিক্ষক, আধুনিক পাঠ্যক্রম, প্রযুক্তিনির্ভর পাঠদান, লাইব্রেরি কিংবা সহায়ক পরিবেশ—এসব কিছুর অভাব আমাদের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থীকে পিছিয়ে দিচ্ছে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রেও চিত্র উদ্বেগজনক। এখনও বহু এলাকায় কন্যাশিশুরা মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করতে পারে না, বাল্যবিবাহ, নিরাপত্তাহীনতা ও সামাজিক বাধা এ ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

অতএব, এখনই সময় কার্যকর, সুদূরপ্রসারী পদক্ষেপ নেওয়ার। এর মধ্যে অন্যতম হলো—

শিক্ষা বাজেটে বরাদ্দ বাড়িয়ে এটিকে জাতীয় অগ্রাধিকারে রাখা

প্রান্তিক অঞ্চলে নতুন ও মানসম্পন্ন বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা

শিক্ষক নিয়োগ ও প্রশিক্ষণে গুণগত পরিবর্তন

গরিব ও ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি ও মিড-ডে মিল

ডিজিটাল শিক্ষা উপকরণ এবং অনলাইন লার্নিং সুবিধার প্রসার

স্থানীয় সরকার ও এনজিওদের সম্পৃক্ত করে সচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ

আমরা যদি চাই একটি মানবিক, উৎপাদনশীল ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে—তাহলে আমাদের শিক্ষানীতিতে সমতা, অন্তর্ভুক্তি ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করতে হবে। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে আজকের শিক্ষানীতির ভিত্তিতে। তাই শহর ও গ্রামের ব্যবধান ঘোচানো, ধনী-গরিব বিভাজন কমানো এবং শিক্ষাকে সবার অধিকার হিসেবে বাস্তবায়নের দায়িত্ব এখন আমাদের সবার—রাষ্ট্র, সমাজ ও ব্যক্তিমাত্রের।

শিক্ষা যেন আর কারও জন্য বিলাসিতা না হয়, বরং প্রতিটি শিশুর জন্মসূত্রে পাওয়া অধিকার হয়ে উঠুক—এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা