শাহনাজ রহমান।।
জীবনের প্রতিটি ধাপে আমরা উপরে উঠতে চাই—নিজেকে ছাড়িয়ে যেতে চাই সময়ের সাথে, প্রতিযোগিতার সাথে, নিজের সীমাবদ্ধতাকে পেছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চাই। কিন্তু এই উর্ধ্বগমনের যাত্রায় কেবল ব্যক্তিগত মেধা বা চেষ্টা-প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়। একটি অনুপম ভূমিকা পালন করে শুভাকাঙ্ক্ষীদের সুমতি—তাদের সদুপদেশ, পরামর্শ, সাহচর্য ও নিঃস্বার্থ অনুপ্রেরণা।
একজন মানুষ যখন স্বপ্ন দেখতে শেখে, সেই স্বপ্ন বাস্তবের মুখ দেখে তখনই, যখন আশেপাশে কেউ না কেউ তাকে বিশ্বাস করতে শেখায়। হয়ত তারা সামনের সারিতে নেই, হয়ত তারা করতালি দেয় না বড় সাফল্যের মঞ্চে, কিন্তু নেপথ্যে তাদের দেয়া সাহসী একেকটি বাক্য, একেকটি মৌন প্রেরণা, অনেক সময় পুরো দৃষ্টিভঙ্গিই পাল্টে দেয়।
শুভাকাঙ্ক্ষী মানে কেবল প্রশংসাকারী নয়। তারা সমালোচনা করেন, তবু সেটা নির্মাণের জন্য। তারা ভুল ধরেন, কিন্তু অপমান করে নয়—বরং নিজের ভিত মজবুত করতে সাহায্য করে। অনেক সময় আমরা দিক হারিয়ে ফেলি, বিভ্রান্ত হই, নিজের উপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলি—ঠিক তখনই শুভাকাঙ্ক্ষীদের সুমতি এক একটি আলোকবর্তিকা হয়ে সামনে পথ দেখায়।
বিশ্ব ইতিহাসেও দেখা যায়, অনেক মহান ব্যক্তি তাদের চলার পথে পেয়েছিলেন এমন কিছু মানুষ, যারা সবসময় তাদের পাশে থেকেছে নীরবে, ভালো চেয়েছে নিঃস্বার্থভাবে। চন্দ্র জয়ের কাহিনী হোক কিংবা বিজ্ঞান, সাহিত্য, রাজনীতির পথচলা—সবখানেই সফল মানুষদের পাশে ছিল কিছু অদৃশ্য ‘প্রেরণাদাতা’। হয়ত তারা শিক্ষক, বন্ধু, পরিবারের কেউ, বা এমনও হতে পারে—কেউ একজন যার শুভকামনা মানুষটিকে আলো দেখিয়েছে।
এখন প্রশ্ন আসে, আমাদের চারপাশে কি এমন শুভাকাঙ্ক্ষী আছেন? আমরা কি তাদের কথা শুনি? কখনও কি বুঝে উঠি, কার উপদেশ আমাদের সত্যিই উপকারে আসছে? কিংবা আমরাও কি কারও শুভাকাঙ্ক্ষী হতে পারি না? সফলতার পেছনে যেমন একজন নিজের পরিশ্রম আছে, ঠিক তেমনি অন্য কেউ একজন থাকে, যার পরামর্শ সেই সফলতাকে টেকসই করে তোলে।
আজকের দিনে যখন প্রতিযোগিতা, ঈর্ষা আর স্বার্থপরতা এত বেশি—তখন একজন শুভাকাঙ্ক্ষীর সুমতি যেন oasis in a desert। এই সুমতিগুলোই মানুষকে সুস্থভাবে এগোতে শেখায়, এবং মানুষের মাঝে সৌহার্দ্য ও মানবিকতার শিকড় গেঁথে দেয়।
শেষ কথা হলো—উপরে উঠতে চাইলে শুধু সিঁড়ি খুঁজলেই হবে না, চোখ কান খোলা রাখতে হবে সেইসব শুভাকাঙ্ক্ষীদের জন্য, যাঁরা নিরবে অনুপ্রেরণার বাতি জ্বালিয়ে রাখেন।