মেঘনা প্রতিনিধি।।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার কাঠালিয়া নদীপথে চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্যে নৌযান চালক ও ব্যবসায়ীরা আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। রোববার (১৭ আগস্ট) বিকালে নৌ পুলিশের অভিযানে চাঁদাবাজির সময় শরিফুল ইসলাম (২২) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সে পাড়ারবন্দ গ্রামের জালাল উদ্দিনের ছেলে।
অভিযানের বিস্তারিত
মেঘনা নৌ পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে পাড়ারবন্দ ব্রিজের দক্ষিণ পাশে চলাচলরত নৌযান থামিয়ে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করছিল একটি সংঘবদ্ধ চক্র। খবর পেয়ে অভিযান চালায় নৌ পুলিশ। এসময় আরিফুলকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করা হয়।
অভিযানকালে একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, একটি ধারালো রামদা এবং নগদ ৪ হাজার ৩০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। তবে সাত-আটজন সহযোগী নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
মেঘনা নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজমগীর হোসেন বলেন,
“আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে। নদীপথে চাঁদাবাজি কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। গ্রেপ্তারকৃত আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা প্রক্রিয়াধীন।”
দীর্ঘদিনের দৌরাত্ম্য
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাঠালিয়া নদীপথে প্রায়ই মালবাহী নৌযান ও বালুবাহী ট্রলারকে লক্ষ্য করে চাঁদাবাজরা হামলা চালায়। নৌযান থামিয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করা এ অঞ্চলে ‘খোলা গোপন’ রহস্যে পরিণত হয়েছে।
একজন ট্রলার মাঝি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“নৌপথে চলাচল করলেই চাঁদা দিতে হয়। না দিলে মারধর করে, কখনো নৌকা থেকে মালামালও লুট করে নিয়ে যায়।”
ব্যবসায়ীদের ক্ষতি
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চাঁদাবাজির কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে। এতে মালামালের দামও বাড়ছে।
একজন ব্যবসায়ী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন,
“নৌপথই আমাদের প্রধান পরিবহন ব্যবস্থা। কিন্তু প্রতিদিন এই ভয়ে থাকতে হয়—আজকে আবার কে আটকে চাঁদা চাইবে।”
পুলিশের চ্যালেঞ্জ
পুলিশ জানিয়েছে, নদীপথে চাঁদাবাজি বন্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হলেও চক্রটি পাল্টে পাল্টে নতুন কৌশল নেয়। হঠাৎ নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের ধরতে সমস্যা হয়। তবে পলাতক সদস্যদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিয়েছে নৌ পুলিশ।
এলাকাবাসী জানান
মেঘনার নদীপথ স্থানীয় যোগাযোগের পাশাপাশি বাণিজ্যের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ পথে চাঁদাবাজির ভয় দূর করতে টেকসই নিরাপত্তা ব্যবস্থা জরুরি। নৌ পুলিশের অভিযান প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম চক্র পুরোপুরি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত আতঙ্ক কাটবে না।