নাইম সিকদার :
রাজনীতির মূল দর্শন হওয়া উচিত জনগণের কল্যাণ, সেবার মানসিকতা ও আদর্শিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বর্তমানে রাজনীতির মাঠে একটি বিপজ্জনক প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ব্যয়বহুল সভা-সমাবেশ আয়োজনের মাধ্যমে নেতৃত্বের ক্ষমতা প্রমাণের প্রতিযোগিতা। এ যেন এক ধরনের প্রচ্ছন্ন বার্তা “আমার টাকা আছে, আমি নেতৃত্ব দিতে পারি।” অথচ রাজনীতির শক্তি অর্থ নয়, আদর্শ ও জনগণের ভালোবাসা।এই ব্যয়বহুল সংস্কৃতি রাজনীতিকে দিন দিন কলুষিত করছে। যারা অনিয়ম, চাঁদাবাজি বা অন্য উপায়ে অর্থ জোগাড় করে মাঠে ব্যয়বহুল আয়োজন করে, তারা হয়তো মুহূর্তের জন্য আলোচনায় আসে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। এতে সৎ, আদর্শিক ও নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরা রাজনীতি থেকে নিরুৎসাহিত হয়; অনেকেই বিদায় নেয় রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে। ফলে রাজনীতি হয়ে পড়ে অর্থনির্ভর, জনমানবহীন এক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র।অর্থবহ রাজনীতি মানে মানুষের পাশে থাকা। জনগণের সমস্যা শোনা, উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরা, এবং দলীয় ভাবনা মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়া। এজন্য বড় বড় ব্যানার-পোস্টার নয়, প্রয়োজন নিভৃত প্রান্তে সাধারণ মানুষের সাথে আন্তরিক যোগাযোগ। নেতারা যদি বহর নিয়ে না গিয়ে স্বল্পসংখ্যক কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে দিনে একাধিক এলাকায় গণসংযোগ করেন, তবেই প্রকৃত রাজনৈতিক যোগাযোগ গড়ে উঠবে।রাজনীতি হবে মানুষের জন্য, শোডাউন বা প্রদর্শনের জন্য নয়। যে নেতৃত্ব জনগণের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায়, সাধারণ মানুষের কষ্টের অংশীদার হয়, তাদের পাশে দাঁড়ায়, সেই নেতৃত্বই টিকে থাকে ইতিহাসে।অতএব, ব্যয়বহুল ও প্রদর্শনমূলক রাজনীতির এই সংস্কৃতি থেকে ফিরে আসতে হবে। রাজনীতি হবে স্বচ্ছ, মানবিক ও আদর্শভিত্তিক। তবেই রাজনীতির সঙ্গে সাধারণ মানুষের আত্মিক সম্পর্ক অক্ষুণ্ন থাকবে, আর নেতৃত্বে আসবে প্রকৃত সেবকচরিত্রের মানুষ।