October 13, 2025, 3:31 pm
সর্বশেষ:
নির্বাচনী দায়িত্বে দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত নিজের বিবেক লিজ দেবেন না: দুদক কমিশনার তিতাস নদীতে ভাসছে ‘মিস্ট্রি হাউস’, কৌতূহল ছড়াচ্ছে চারপাশে মেঘনার দম্পতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত — এলাকায় শোকের মাতম মেঘনায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে মহড়া, র‍্যালি ও আলোচনা গজারিয়ার আনার পুর পরিকল্পিত ইউটার্ণের অভাবে মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ হোমনা পৌরসভার প্রশাসক ঘুমাচ্ছেন? চাঁদপুর নৌ পুলিশের সপ্তম দিনের অভিযানে ৫০ জেলে গ্রেফতার নদীতে ঝোপ: মেঘনাবাসীর সংস্কৃতি না নদী হত্যার বৈধ অজুহাত? সিআইডিতে ফরেনসিক তদন্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণে ৬০ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অংশগ্রহণ

সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে পেশাদারিত্ব ও সময়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে

বিপ্লব সিকদার :

সাংবাদিকতা একটি মহান দায়িত্ব ও সমাজ নির্মাণের অন্যতম ভিত্তি। এটি শুধু খবর প্রকাশের মাধ্যম নয়, বরং সমাজের সত্য, ন্যায় ও জবাবদিহিতার আয়না। কিন্তু বর্তমান যুগে এই আয়নাটি ক্রমশ ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে কারণ পেশাদারিত্বের অভাব, সময়জ্ঞানহীনতা এবং অপেশাদারদের দৌরাত্ম্য। সাংবাদিকতা টিকিয়ে রাখতে হলে আজ সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পেশাগত দক্ষতা, নৈতিকতা এবং সময়ের সঠিক ব্যবহার।

ভালো লেখাই একজন সাংবাদিকের সাফল্যের একমাত্র শর্ত নয়; বরং কোন সংবাদ কখন প্রকাশ করা উচিত, কোন খবর সমাজে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে এবং কোনটি বিভ্রান্তি তৈরি করবে—এই বিচারবোধই একজন সাংবাদিককে প্রকৃত পেশাদারে পরিণত করে। সাংবাদিকতার মর্মবাণী হলো সত্য ও সময়। সত্য প্রকাশ করতে হলে তথ্য যাচাইয়ের দক্ষতা দরকার, আর সময়মতো সংবাদ উপস্থাপন করতে হলে প্রয়োজন অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতা।

বর্তমান সময়ের সবচেয়ে বড় সংকট হলো নাগরিক সাংবাদিকতার বেড়াজাল। প্রযুক্তির উন্নয়নে এখন যে কেউ স্মার্টফোন হাতে সংবাদ প্রকাশ করছে। এটি একদিকে তথ্যপ্রবাহ বাড়ালেও, অন্যদিকে পেশাদার সাংবাদিকতার জন্য হুমকি হয়ে উঠেছে। কারণ, এই তথাকথিত সংবাদগুলোর অনেকাংশই যাচাই-বাছাইহীন, পক্ষপাতদুষ্ট এবং কখনও কখনও মিথ্যা। এতে পাঠক বিভ্রান্ত হচ্ছে, সাংবাদিকতার বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হচ্ছে।

এই অবস্থায় পেশাদার সাংবাদিকদের দায়িত্ব আরও বেড়ে গেছে। তাদের কেবল সংবাদ লিখলেই হবে না, বরং প্রতিনিয়ত নিজেদের দক্ষতা বাড়াতে হবে, তথ্য যাচাইয়ের নতুন কৌশল শিখতে হবে, এবং সমাজে ভুল তথ্যের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে। পেশাদার সাংবাদিকদের উচিত নিজেদের কাজের মাধ্যমে এমন মান তৈরি করা, যা অপেশাদারদের ভিড়ে আলাদা করে চিহ্নিত হয়।

অনেকেই মনে করেন, সাংবাদিকতার সার্টিফিকেট থাকলেই সাংবাদিক হওয়া যায়। কিন্তু বাস্তবে সনদ নয়, সাংবাদিকতার প্রাণ হলো দক্ষতা। একজন প্রকৃত সাংবাদিক জানেন কীভাবে ঘটনা বিশ্লেষণ করতে হয়, কোন তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, কোনটি গৌণ, এবং কিভাবে পাঠকের কাছে সত্যকে আকর্ষণীয়ভাবে উপস্থাপন করা যায়। দক্ষতা আসে নিয়মিত চর্চা, পর্যবেক্ষণ ও দায়িত্ববোধ থেকে। তাই সাংবাদিকতার প্রশিক্ষণ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার কোনো বিকল্প নেই।

সাংবাদিকতায় সৃজনশীলতা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শুধু সংবাদ প্রকাশ নয়, তার পেছনের প্রেক্ষাপট, প্রভাব ও সম্ভাব্য সমাধান তুলে ধরাই একজন আধুনিক সাংবাদিকের কাজ। মানুষ এখন শুধুই তথ্য চায় না, তারা জানতে চায় ঘটনাটির তাৎপর্য কী, সমাজে তার প্রভাব কী হবে। সেজন্য সাংবাদিকদের বিশ্লেষণধর্মী ও অনুসন্ধানী দৃষ্টিভঙ্গি অর্জন করা জরুরি।

অপেশাদার সংবাদকর্মীদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে। যারা সাংবাদিকতার নৈতিকতা লঙ্ঘন করে গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে পেশাদার সমাজকে সোচ্চার হতে হবে। গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাংবাদিক নিয়োগে পেশাগত মানদণ্ড কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হবে। একই সঙ্গে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকেও নীতিনির্ভর চর্চা বাড়াতে হবে।

সাংবাদিকতার মূল ভিত্তি হলো নৈতিকতা। মিথ্যা, বিকৃত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ সমাজে বিভ্রান্তি তৈরি করে এবং সাংবাদিকতার প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট করে। সত্য প্রকাশের সাহস, নিরপেক্ষ দৃষ্টিভঙ্গি ও মানবিক দায়বদ্ধতা—এই তিন গুণই একজন সাংবাদিকের শক্তি।

আজকের গণমাধ্যমকে টিকে থাকতে হলে শুধুমাত্র খবর প্রকাশ নয়, বরং আস্থা অর্জন করতে হবে। পাঠকের বিশ্বাসই গণমাধ্যমের মূল সম্পদ। সেই বিশ্বাস অর্জনের জন্য সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব বজায় রাখতে হবে, সময়মতো তথ্য প্রকাশ করতে হবে, এবং সৃজনশীলতার মাধ্যমে সংবাদকে জীবন্ত করে তুলতে হবে।

ডিজিটাল যুগে সাংবাদিকদের প্রযুক্তিতে দক্ষ হতে হবে। ডেটা বিশ্লেষণ, ফ্যাক্ট-চেকিং, ভিডিও সাংবাদিকতা—সব ক্ষেত্রে নিজেকে আপডেট রাখা জরুরি। নিয়মিত প্রশিক্ষণ, পাঠাভ্যাস, এবং বিশ্বমানের সাংবাদিকতার সঙ্গে পরিচিত হওয়াই একজন সাংবাদিককে সময়োপযোগী করে তুলবে।

সত্য, সময় ও পেশাদারিত্ব—এই তিনের সমন্বয়েই সাংবাদিকতা টিকে থাকবে। যে সাংবাদিক এই তিনটি গুণ অর্জন করতে পারবে, সে শুধু পেশায় নয়, সমাজেও সম্মান অর্জন করবে। সাংবাদিকতা কোনো বাণিজ্য নয়, এটি এক মহৎ দায়িত্ব। এই দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে গণতন্ত্র ও সমাজ উভয়ই ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

তাই এখনই সময়, সাংবাদিকতা পেশাকে বাঁচাতে পেশাদারিত্বের চর্চা বাড়াতে হবে, সময়জ্ঞান উন্নত করতে হবে, এবং অপেশাদার প্রবণতার বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। নৈতিকতা, দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার সমন্বয়েই সাংবাদিকতা আবার সমাজের আস্থা ফিরে পাবে।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা