October 13, 2025, 12:53 pm
সর্বশেষ:
নির্বাচনী দায়িত্বে দক্ষতা বৃদ্ধিতে পুলিশের প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত নিজের বিবেক লিজ দেবেন না: দুদক কমিশনার তিতাস নদীতে ভাসছে ‘মিস্ট্রি হাউস’, কৌতূহল ছড়াচ্ছে চারপাশে মেঘনার দম্পতি সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত — এলাকায় শোকের মাতম মেঘনায় আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবসে ভূমিকম্প ও অগ্নিকাণ্ড বিষয়ে মহড়া, র‍্যালি ও আলোচনা গজারিয়ার আনার পুর পরিকল্পিত ইউটার্ণের অভাবে মহাসড়ক এখন মৃত্যুফাঁদ হোমনা পৌরসভার প্রশাসক ঘুমাচ্ছেন? চাঁদপুর নৌ পুলিশের সপ্তম দিনের অভিযানে ৫০ জেলে গ্রেফতার নদীতে ঝোপ: মেঘনাবাসীর সংস্কৃতি না নদী হত্যার বৈধ অজুহাত? সিআইডিতে ফরেনসিক তদন্ত বিষয়ে প্রশিক্ষণে ৬০ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের অংশগ্রহণ

আইনসম্মত শিল্পায়নই সুষম উন্নয়নের গ্যারান্টি

বিপ্লব সিকদার :

শিল্পায়ন একটি দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির অন্যতম হাতিয়ার। কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন এবং টেকসই উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নের বিকল্প নেই—এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো, আমরা কেমন শিল্পায়ন চাই? এমন শিল্পায়ন কি কাম্য, যা সাধারণ মানুষের জমি দখল করে, নদী শুকিয়ে দেয়, সরকারি খাস জমি কুক্ষিগত করে এবং পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করে? নিশ্চয়ই না।দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের দেশে অনেক ক্ষেত্রেই শিল্পায়নের নামে চলছে অনিয়ম, দখলবাজি ও ক্ষমতার অপব্যবহার। প্রভাবশালী গোষ্ঠী ও মাফিয়াচক্র শিল্প প্রতিষ্ঠার নামে সরকারি সম্পদ দখল করে নিচ্ছে, শ্রেণি পরিবর্তনের মাধ্যমে খাসজমি লিজ নিচ্ছে, স্থানীয় জনগণের স্বার্থ উপেক্ষা করছে। পরিণতিতে তারা বিশাল শিল্পপতি হয়ে ওঠে, কিন্তু সমাজে তৈরি হয় বৈষম্য, পরিবেশ ধ্বংস এবং সংঘাত।

শিল্পায়ন কোনোভাবেই যদি জনগণের ক্ষতির বিনিময়ে হয়, তবে তা উন্নয়ন নয়—বরং একধরনের দখলনীতি। এই দখলনীতির কারণে শিল্পাঞ্চলগুলোতে সৃষ্টি হয় আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, সশস্ত্র সংঘর্ষ, এমনকি হত্যাকাণ্ডও ঘটে। কুমিল্লার মেঘনা উপজেলাই তার একটি বাস্তব উদাহরণ।

এ উপজেলায় দেশের অন্যতম শিল্প প্রতিষ্ঠান মেঘনা গ্রুপের তত্ত্বাবধানে গড়ে উঠেছে কুমিল্লা ইপিজেড-২। পাশাপাশি চালিভাঙ্গা ইউনিয়নে হাজার হাজার বিঘা জমি ক্রয়, দখল ও সরকারি খাল দখল করে নতুন ইপিজেড গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াকে ঘিরে স্থানীয় রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব। ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক আব্দুল গাফফার, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য কাইয়ুম, নুরুল আমিন মেম্বার, হুমায়ুন কবির সরকার চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে একাধিক হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এলাকা এখনো উত্তেজনাপূর্ণ; যেকোনো মুহূর্তে আবারও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটতে পারে।

আমি নিজে এ এলাকার বাসিন্দা হিসেবে এসব অনিয়ম, দখল ও সংঘাত প্রত্যক্ষ করেছি। শিল্পায়নের নামে যদি সাধারণ মানুষের ক্ষতি হয়, নদী ও পরিবেশ ধ্বংস হয়, স্থানীয়দের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হয় তাহলে সেই শিল্পায়ন দেশ ও জাতির কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

আমাদের বুঝতে হবে, উন্নয়ন মানে শুধু বড় বড় কারখানা গড়ে তোলা নয়; উন্নয়ন মানে ন্যায়বিচার, পরিবেশের ভারসাম্য, স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ও অধিকার রক্ষা। শিল্পায়ন হতে হবে সুশাসনের আলোকে, আইন মেনে, স্বচ্ছতার সঙ্গে।

বাংলাদেশে আজ অনেক জায়গায় দেখা যায়, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকরা স্থানীয় জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ না করেই জমি অধিগ্রহণ করে, নদী ভরাট করে, খাল দখল করে, পরিবেশ ধ্বংস করে ফেলছে। এসব কর্মকাণ্ডের দায় শুধু ব্যক্তিগত নয়, প্রশাসনের অবহেলাও এখানে দায়ী। আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কার্যকর ভূমিকা না থাকলে শিল্পায়ন দুর্নীতি ও দখলবাজির কবলে পড়ে যায়।অতএব, এখন সময় এসেছে শিল্পায়নের প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নেওয়ার। শিল্পায়ন হবে আইন ও নীতিমালা মেনে,পরিবেশের ক্ষতি না করে,স্থানীয় জনগণের মতামত ও স্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে,এবং সর্বোপরি জবাবদিহিতার আওতায়।জনগণ আশাবাদী, বর্তমান ইন্টারিম সরকার এবং ভবিষ্যতের নির্বাচিত সরকার শিল্পায়নের এই নৈতিক দিকগুলো বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবে। কারণ টেকসই শিল্পায়ন মানে শুধু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নয়, বরং সামাজিক ন্যায়বিচার ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা।শিল্পায়ন আমাদের প্রয়োজন, কিন্তু তা হতে হবে ন্যায়ভিত্তিক ও মানবিক। উন্নয়নের নামে দখল, লুটপাট ও বিশৃঙ্খলা কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়। আইনসম্মত শিল্পায়নই সুষম উন্নয়নের গ্যারান্টি এ সত্য আমাদের সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে।

লেখক, সাংবাদিক।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা