পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা ও টিউলিপ সিদ্দিকসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলার রায় ঘোষণা করা হবে আজ সোমবার। ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪-এর বিচারক মো. রবিউল আলম এ রায় ঘোষণা করবেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) বিশেষ পিপি তরিকুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, গত ২৫ যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে রায়ের তারিখ ধার্য করা হয়।
এ মামলায় অন্য যাঁরা আসামি তাঁরা হলেন—সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, মন্ত্রণালয়ের সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন-২) মো. অলিউল্লাহ, সাবেক অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক চেয়ারম্যানের মো. আনিছুর রহমান মিঞা পিএএ, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য (উন্নয়ন) মেজর (ইঞ্জি.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী (অব.), সাবেক পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) মাজহারুল ইসলাম, সাবেক উপপরিচালক (এস্টেট ও ভূমি) নায়েব আলী শরীফ এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন।
গত ৩১ জুলাই আদালত এ মামলায় শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন।
গত ১২, ১৩ ও ১৪ জানুয়ারি দুর্নীতির দমন কমিশন (দুদক) শেখ হাসিনা, তাঁর পরিবারের সদস্য ও অন্যদের বিরুদ্ধে ছয়টি মামলা দায়ের করে। এর মধ্যে তিনটি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে গত ২৭ নভেম্বর। তিন মামলায় শেখ হাসিনাকে ২১ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অন্য দুই মামলায় পৃথকভাবে শেখ হাসিনার ছেলে জয়কে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড এবং মেয়ে পুতুলকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও রাজউকের প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত দায়িত্বে থাকা অন্যদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
গত ২৫ মার্চ ছয় মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে দুদক।
এ মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা বরাদ্দ পাওয়ার যোগ্য না হওয়া সত্ত্বেও অসৎ উদ্দেশ্যে পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার একটি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
মামলায় আরও অভিযোগ করা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের সর্বোচ্চ পদাধিকারী ও পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে বহাল থেকে তার ওপর অর্পিত ক্ষমতার অপব্যবহার করে, অপরাধজনক বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রকল্পের বরাদ্দ-বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত গণকর্মচারীদের বা রাজউক কর্মচারীদের প্রভাবিত করে শেখ রেহানাকে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন। শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক তাঁর মাকে প্লট বরাদ্দে বিশেষ ক্ষমতা বলে প্রত্যক্ষ প্রভাব খাটিয়েছেন। অন্যদিকে রাজউকের প্রকল্প বরাদ্দ-বিষয়ক কর্মচারীরা নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে নিয়ম-বহির্ভূতভাবে প্লট বরাদ্দ দিয়েছেন।
হাসিনার সঙ্গে আজমির ও রাদওয়ানের মামলা
একই আদালতে প্লট বরাদ্দে দুর্নীতির অন্য দুটি মামলা বিচারাধীন। আজ সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য রয়েছে। এর একটি হচ্ছে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত এবং অন্যটি হচ্ছে শেখ রেহানার মেয়ে আজমিনা সিদ্দিকের প্লট বরাদ্দ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা।
রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিকের মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আজ ১ ডিসেম্বর দিন ধার্য রয়েছে। আর আজমির মুজিবের মামলা সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য আগামী ৫ জানুয়ারি দিন ধার্য করা হয়েছে।