ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কুমিল্লা জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে গঠিত নির্বাচনি অনুসন্ধান ও বিচারিক কমিটি শুধু প্রশাসনিক নজরদারির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং এ কমিটিগুলোকে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম দমন ও তাৎক্ষণিক বিচার নিশ্চিত করার জন্য সরাসরি আইনগত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, এসব কমিটি গঠিত হয়েছে The Representation of the People Order, 1972 (RPO)-এর Article 91A ও 91AA অনুসারে। এই বিধান অনুযায়ী, নির্বাচন-পূর্ব পর্যায়ে সংঘটিত অনিয়ম তদন্তের পাশাপাশি নির্বাচনী অপরাধের ক্ষেত্রে সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনার ক্ষমতা সংশ্লিষ্ট বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, Article 91A নির্বাচনি অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি ব্যতিক্রমী বিধান। এ ধারার আওতায় বিচারিক কমিটি কোনো অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তদন্ত শুরু করতে পারে। অভিযোগ দায়েরের জন্য দীর্ঘ প্রক্রিয়ার প্রয়োজন নেই এবং সরেজমিনে তদন্ত, সাক্ষ্য গ্রহণ ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদানের এখতিয়ার কমিটির রয়েছে।
অন্যদিকে, Article 73, 75, 77 এবং Article 91B (3)-এর আওতায় যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়—যেমন ভোটারকে ভয়ভীতি প্রদর্শন, আচরণবিধি লঙ্ঘন, নির্বাচনী প্রচারে বেআইনি অর্থ বা শক্তি প্রয়োগ—এসব ক্ষেত্রে কমিটি সংক্ষিপ্ত বিচার পরিচালনা করতে পারবে। অর্থাৎ প্রচলিত আদালতের দীর্ঘসূত্রতা ছাড়াই তাৎক্ষণিক আদেশ, জরিমানা কিংবা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কুমিল্লার মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জেলায় এ ক্ষমতা প্রয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ নির্বাচন-পূর্ব সময়ে সহিংসতা, পোস্টার-ব্যানার নিষিদ্ধ থাকা সত্ত্বেও প্রচার, প্রভাব বিস্তার কিংবা ভোটার প্রভাবিত করার অভিযোগ তুলনামূলকভাবে বেশি দেখা যায়।
আইনগতভাবে এসব কমিটি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মতো নয়; বরং তারা বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা, ফলে তাদের সিদ্ধান্তের আইনগত ভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতা অধিক শক্তিশালী। প্রয়োজনে তারা অভিযুক্তকে তলব, সাক্ষ্য গ্রহণ এবং ঘটনাস্থল পরিদর্শনের ক্ষমতাও প্রয়োগ করতে পারবেন।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা মনে করছেন, কুমিল্লা জেলার ১১টি আসনে এ বিচারিক কমিটির সক্রিয় ভূমিকা নির্বাচনী মাঠে একটি আইনগত সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করবে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঝুঁকি যেমন কমবে, তেমনি প্রার্থীদের মধ্যে সমান প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হবে।