March 3, 2025, 2:06 pm
সর্বশেষ:
বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ইউনিয়ন বিএনপির নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করলেন সেলিম ভূঁইয়া কুমিল্লায় বাজার মনিটরিং টাস্কফোর্সের অভিযান মেঘনায় বাজার নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসনের আলোচনা সভা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার নাটক সাজিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন মেঘনায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত লাকসাম যাওয়ার পথে মির্জা ফখরুলকে শুভেচ্ছা জানান অধ্যক্ষ মোঃ সেলিম ভূঁইয়া মেঘনায় এসিল্যান্ডসহ কর্মকর্তাহীন একাধিক দপ্তর, সেবাবঞ্চিত নাগরিকরা ডিসিদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশ হাসিনা এখনো ক্ষমতায় থাকলে আমাদের ফাঁসি দিয়ে দিত : রুহুল কবির রিজভী  আজ মেঘনা উপজেলা বিএনপির কাউন্সিল, প্রধান অতিথি রিজভী

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার নাটক সাজিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন

বিপ্লব সিকদার।। 

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলার নাটক সাজিয়ে অবৈধ বালু উত্তোলন, ইউএনওকে ফাঁদে ফেলানো অপচেষ্টা চালাচ্ছেন বালু উত্তোলনকারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ জড়িত একটি শক্তিশালী চক্র।আমার দেশের অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে। সকলকে আতঙ্কে ফেলে দিয়েছে। জনগনের চোখে ধোলা দিতে চক্রটি নিয়েছে এমন কৌশল। উপজেলার চালিভাঙ্গা ইউনিয়নটি একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো, চারদিকে নদী বেষ্টিত। সড়কপথে সেখানে পৌঁছানোর কোনো ব্যবস্থা নেই, একমাত্র নৌযানই যাতায়াতের মাধ্যম। এর ফলে অবৈধ বালু উত্তোলনকারী চক্রের জন্য এটি সুবিধাজনক জায়গায় পরিণত হয়েছে। রাত বাড়লেই রামপ্রসাদের চরে শুরু হয় অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কর্মযজ্ঞ। গভীর রাত থেকে ভোর পর্যন্ত নদীর বুক চিরে চলে এই তৎপরতা, আর দিনের আলো ফোটার আগেই চক্রটি গায়েব হয়ে যায়। নদী থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে রামপ্রসাদের চর এলাকার প্রায় ১০০ একর জমি বিলীন হয়ে গেছে। এতে তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা ধসে যাচ্ছে, বাড়ছে ভাঙনের ঝুঁকি। এ বিষয়ে বালু দস্যুদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা,ইউএনও, জেলা প্রশাসক বরাবর এলাকাবাসীর অভিযোগ লিখিত রয়েছে। যৌথ বাহিনী সহ সরকারের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ অবৈধ বালু উত্তোলন সম্পর্কে অবগত থাকলেও কার্যত বন্ধ করতে পারছেনা। বালু উত্তোলনকারীদের একাধিক সহযোগির সাথে কথা বলে জানা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সহ সব সেক্টরে মাশোহারা দিয়ে সবার মুখ বন্ধ করেই বালু উত্তোলন করে। ৫ আগষ্টের পর থেকে চিহ্নিত চক্রটি বালু উত্তোলন করলে সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ, পত্রিকায় রিপোর্ট হওয়ার পর যৌথ বাহিনী রাতে অভিযান পরিচালনা করতে গেলে আভিযানিক দলের উপর হামলা চালায়। অপরদিকে চালিভাঙ্গা নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ যিনি মুলত বালু উত্তোলনের মুল সমন্বয়ক, আজমগীর (বর্তমানে প্রশিক্ষণে) সম্প্রতি অভিযান পরিচালনা করতে গিয়ে হামলার যে ঘটনা ঘটেছে তা ছিল বালু উত্তোলন কারীদের সাথে সমঝোতার হামলা। যা একাধিক সূত্র থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে। এদিকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট বার বার অভিযোগ নিয়ে আসলে তিনি নিয়ম অনুযায়ী যৌথ বাহিনী, মেঘনা থানা, বিশেষ করে চালিভাঙ্গা নৌ পুলিশ ফাঁড়িকে চাপ দিলে আমাদের জীবনের ঝুঁকি আছে এমন অজুহাতের কথা জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাদিমুজ্জামান জামান চাঁদপুর অঞ্চলের নৌ পুলিশ সুপার কে বালু উত্তোলন বন্ধের জন্য ফোন করলে তিনি বলেন তুমি গিয়ে বন্ধ করো এমনকি একটি রাজনৈতিক দলের নেতার প্রতি ইংগিত করে বলো উনাকে বন্ধ করতে। এই প্রতিবেদককে এমনটাই জানিয়েছেন ছাত্র সমন্বয়ক। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা যায় ইউএনও বার বার অভিযানের তাগিদ, উর্ধ্বতন কর্মকতাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে চিঠি দিয়ে বার বার জানানোর ফলে যেন অভিযানে যেতে না হয় তার জন্য বিভিন্ন নাটকীয় অজুহাত সৃষ্টি করে রাখা, এবং দাপ্তরিক ভাবে ইউএনও কে ফাঁদে ফেলার স্বরযন্ত্র করে আসছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কামরুজ্জামান বলেন, ‘নদীর পাড় ঘেঁষে বসবাসরত মানুষের মনে আতঙ্ক-আজ না হয় কাল, তাদের ঘরবাড়ি, ফসলি জমি সব নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে।’

চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের একাধিক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, বালুখেকোদের লাগামহীন দৌরাত্ম্যে এলাকার কৃষিজমি ও বসতভিটা হারিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে স্থানীয়ভাবে একটি সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বালু উত্তোলনকারীরা কার্যক্রম বন্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়। এরপর প্রায় ২০ দিন কাজ বন্ধও ছিল, তবে গত দুই সপ্তাহ ধরে আবারও শুরু হয়েছে রাতভর বালু উত্তোলন। তারা আরও জানান, বালু খেকোরা বাল্কহেডগুলো দিনের বেলা নলচর ট্রলার ঘাটে রাখে, আর পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁ ও গজারিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ড্রেজার লুকিয়ে রাখা হয়। বালুবাহী বাল্কহেডগুলো আড়াইহাজার ও বৈদ্যেরবাজার হয়ে মেঘনা সেতুর নিচ দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছায়। বালু উত্তোলনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ফসলি জমির পরিমাণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। এছাড়া স্থানীয় বাসিন্দারা বাধা দিতে গেলে বা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের অবগত করলে তাদেরকে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়। ফলে আতঙ্কিত হয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।

কুমিল্লা জেলা যুবদলের সদস্য ও মেঘনা থানা যুবদলের পদপ্রার্থী হোসাইন মোহাম্মদ মহসিন মিয়া বলেন, নলচর গ্রামের চালিভাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি বারেক প্রধান, মেঘনা থানা যুবদলের আহ্বায়ক রবিউল্লাহ রবি, ইউনিয়ন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন, মেঘনা থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক হাসনাত প্রধানসহ আরও কয়েকজন এই অবৈধ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে এই অপরাধে নিয়মিত মামলা হয়েছিল।

অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে অভিযুক্ত কয়েকজনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।

চালিভাঙ্গা নৌপুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আজমগীর হোসাইন বলেন, ‘আমি গত রাত সহ অনেকবার অভিযান চালিয়েছি, কোন রকম নিজের জীবন টা রক্ষা করে সেফ জোনে এসেছি, আমার জীবন এখন অনেক ঝুঁকিতে রয়েছে কিন্তু তারা রাতের আঁধারে কাজ করে। সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও স্থানীয়দের সহযোগিতা ছাড়া এটি বন্ধ করা কঠিন। সবাই নৌ পুলিশের উপর দোষ চাপিয়ে নিজেদেরকে আড়াল করে রাখছে। মেঘনা থানা পুলিশ, সেনাবাহিনী কেউ আমাদের সহযোগিতা করেনা।

চাঁদপুর রিজিওনের কোস্টগার্ডের (লে.) কমান্ডার তাকিউল আহসান জানান, ‘চালিভাঙ্গা এলাকাটি আমাদের আওতার বাইরে। তারপরও আমরা অভিযান চালাই। তবে জেলা প্রশাসন যদি আমাদের দায়িত্ব দেয়, তাহলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা সম্ভব হবে।’

বাঞ্ছারামপুর, হোমনা ও মেঘনা অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন আদিল শাহরিয়ার বলেন, ‘খুব শিগগিরই ওই এলাকার বালুখেকোদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। নৌপথে চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযানের সময় হামলার শিকার হতে হয়েছে। তবে অচিরেই বড় ধরনের অভিযান চালানো হবে।’

চালিভাঙ্গা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, ‘প্রতিদিন বালু উত্তোলন করা হয়। বাধা দেওয়া সম্ভব নয়, কারণ আমাদের দল ক্ষমতায় নেই। যারা বালু উত্তোলন করে, তারাই নদীপথ থেকে প্রতিদিন এক থেকে দেড় লাখ টাকা চাঁদা উঠায়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হ্যাপী দাস বলেন, ‘আমি সেনাবাহিনী, কোস্টগার্ডকে অবহিত করেছি। বালু উত্তোলন বন্ধের জোড়ালো চেষ্টা চলছে। তবে আভিযানিক দল হামলার সম্মুখীন হওয়ায় ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেনা।

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা