বাসস।।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় স্বাস্থ্য সংস্কার কমিশন। ছবি: ফেসবুক
দেশের স্বাস্থ্য খাতে দীর্ঘদিনের অচলাবস্থা নিরসনে এবং জনগণের দোরগোড়ায় মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ৩২টি সুপারিশ সংবলিত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন।
আজ সোমবার বেলা ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় কমিশনের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এ প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়।
প্রতিবেদনের মূল লক্ষ্য উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা এবং প্রতিটি নাগরিকের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা।
প্রতিবেদনে উল্লেখযোগ্য সুপারিশের মধ্যে রয়েছে:
সাংবিধানিক অধিকার ও নতুন আইন:
* প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা।
* এই অধিকার বাস্তবায়নের জন্য ‘প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা আইন’ প্রণয়নের প্রস্তাব, যা নাগরিকদের বিনা মূল্যে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার অধিকার এবং রাষ্ট্রের দায়িত্ব নির্ধারণ করবে।
* স্বাস্থ্য খাতে ন্যায্যতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন আইন’, ‘বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস আইন’, ‘জনস্বাস্থ্য ও অবকাঠামো আইন’, ‘বাংলাদেশ সেফ ফুড, ড্রাগ, আইভিডি ও মেডিকেল ডিভাইস আইন’, ‘ওষুধের মূল্য নির্ধারণ ও প্রাপ্তি আইন’, ‘স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী ও রোগী নিরাপত্তা আইন’ সহ মোট ১৫টি নতুন আইন প্রণয়নের প্রস্তাব।
* বিদ্যমান আইন, যেমন ‘বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল আইন’, ‘নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল আইন’ ইত্যাদি সংশোধনের সুপারিশ।
স্বাস্থ্য কমিশন ও হেলথ সার্ভিস:
স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি প্রণয়নে সংসদ ও সরকারকে পরামর্শ দিতে একটি স্বাধীন ও স্থায়ী ‘বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন’ গঠনের প্রস্তাব।
পেশাদার, দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস (বিএইচএস) নামে একটি নতুন সিভিল সার্ভিস গঠনের সুপারিশ।
স্বাস্থ্য খাতের নিয়োগ ও পদোন্নতি প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে স্বতন্ত্র ‘পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) ’ গঠনের প্রস্তাব।
সেবার মান ও প্রাপ্যতা:
প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে (ক্ষেত্রবিশেষে ভর্তুকি মূল্যে) প্রদানের সুপারিশ।
* উপজেলা পর্যায়ে সেকেন্ডারি স্বাস্থ্যসেবা জোরদার এবং জেলা হাসপাতালগুলোতে বিশেষায়িত (টারশিয়ারি স্তরের) চিকিৎসা চালুর প্রস্তাব।
প্রতিটি বিভাগীয় সদরে বিশ্বমানের টারশিয়ারি সেবা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার সুপারিশ।
প্রতি রোগীর জন্য গড়ে ১০ মিনিটের পরামর্শ সময় নিশ্চিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
দেশের ২০ শতাংশ অতি দরিদ্র নাগরিকের জন্য সব হাসপাতালে বিনা মূল্যে সেবা প্রদানের সুপারিশ।
সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো পর্যায়ক্রমে বিশেষজ্ঞদের নেতৃত্বে পরিচালনার প্রস্তাব।
হাসপাতালে মানোন্নয়নের জন্য কার্যকরী মান উন্নয়ন পর্ষদ ও কন্টিনিউড এডুকেশন পদ্ধতির ব্যবস্থা করার সুপারিশ।
ওষুধ ও জরুরি সেবা:
অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সর্বজনীন প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকারি ওষুধ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকায়ন ও বেসরকারি খাত থেকে সাশ্রয়ী মূল্যে ওষুধ সংগ্রহের প্রস্তাব।
অ্যান্টি-ক্যানসার, অ্যান্টি-ডায়াবেটিক, অ্যান্টি-হাইপারটেনসিভ ও অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিবায়োটিকের ওপর ভ্যাট এবং অন্যান্য শুল্ক ও কর শূন্য করার সুপারিশ।
ভিটামিন, মিনারেলস, ব্রেস্ট মিল্ক সাবস্টিটিউট ও প্রোবায়োটিকের ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব।
জরুরি চিকিৎসাকে বিশেষায়িত ও অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা হিসেবে অগ্রাধিকার দেওয়ার সুপারিশ।
নেটওয়ার্ক ও অভিযোগ নিষ্পত্তি:
জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্ক, জাতীয় ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরি নেটওয়ার্ক, জাতীয় রক্ত সঞ্চালন নেটওয়ার্ক এবং জাতীয় অ্যাম্বুলেন্স নেটওয়ার্ক গঠনের প্রস্তাব।
সেবাগ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলার সুপারিশ।
এ ছাড়া অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করতে প্রতিটি সরকারি হাসপাতাল ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ফার্মেসি ২৪ ঘণ্টা চালু রাখার সুপারিশ করা হয়েছে। এই ফার্মেসিগুলো জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় পরিচালিত হবে।