নিজস্ব প্রতিবেদক।।
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলায় কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। চায়ের দোকান, বাজার মোড় বা স্কুল গেটের সামনে দলবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা কিশোরদের এখন আর কেউ নিছক ‘আড্ডাবাজ’ ভাবতে পারছে না। অভিযোগ রয়েছে—স্থানীয় কিছু গডফাদার তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে মদদ দিচ্ছে।
কিশোর বয়সেই অপরাধের হাতছানি
বিদ্যালয় ফাঁকি দিয়ে অনেকে দল বেঁধে ঘোরাফেরা করে। শুরুতে এটি আড্ডা হলেও দ্রুত তা গ্যাং সংস্কৃতিতে রূপ নেয়। মাদক বহন, চুরি, ছিনতাই, রাজনৈতিক মিছিল বা বিরোধীদের ওপর হামলার কাজে ব্যবহার করা হয় এই কিশোরদের।
একাধিক অভিভাবক অভিযোগ করেছেন, সন্তানদের কু-সংসর্গ থেকে দূরে রাখতে চাইলেও সামাজিক প্রতিপত্তিশালী ব্যক্তিদের প্রভাবে তারা ব্যর্থ হচ্ছেন।
গডফাদারদের ছায়ায় অপরাধের প্রশ্রয়
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতাসহ বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি নিজেদের স্বার্থে কিশোরদের ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কেউ জমি দখলের জন্য, কেউ প্রতিপক্ষকে হুমকি দিতে—এই কিশোর গ্যাং সদস্যদের ভাড়াটে হিসেবে ব্যবহার করছে।
একজন সাবেক ইউপি সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন,
“অনেক সময় থানায় অভিযোগ করা হলেও প্রভাবশালীদের কারণে তদন্ত থেমে যায়। কিশোরদের ছাড়িয়ে আনতে প্রভাবশালীরা সরাসরি চাপ দেন।”
প্রশাসনও বিপাকে
মেঘনা থানার একজন কর্মকর্তার বক্তব্য অনুযায়ী,
> “আমরা চেষ্টা করি অভিযান চালাতে। কিন্তু আবার দেখা যায়, যাদের ধরি, তারা পরদিন জামিনে বের হয়ে যায় এবং আগের কাজেই ফিরে যায়। রাজনৈতিক ছত্রছায়া না থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতো।”স্থানীয়দের দাবি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি শিক্ষক, অভিভাবক, মসজিদের ইমাম এবং জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
একজন বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক বলেন,
> “শুধু দমন নয়, গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়া কিশোরদের কাউন্সেলিং ও পুনর্বাসন জরুরি। তা না হলে আমরা একটি বিপথগামী প্রজন্ম গড়ে তুলবো।” মেঘনায় কিশোর গ্যাং এখন আর কল্পনার বিষয় নয়, এটি বাস্তব ও বিপজ্জনক। এই গ্যাংয়ের শেকড় কেটে ফেলার সময় এখনই। নতুবা এই কিশোরদের হাতেই ভবিষ্যতে ভয়াবহ অপরাধ সংঘটিত হবে, যার দায় পুরো সমাজকে বহন করতে হবে।