বিপ্লব সিকদার :
কুমিল্লার মেঘনা উপজেলার চালিভাঙ্গা নৌ পুলিশ ফাঁড়ি মেঘনা, তিতাস ও কাঠালিয়া নদীসহ বিস্তৃত জলসীমায় দায়িত্ব পালন করে আসছে। নদী এই অঞ্চলের মানুষের জীবিকার মূল ভিত্তি; মাছ ধরা, পণ্য পরিবহন, এবং নৌযান চলাচল সবই নির্ভরশীল এই জলপথের ওপর। প্রতিদিন শত শত নৌযান ভাটি অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করে। কিন্তু এই জলপথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই এখন নৌ পুলিশের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই অঞ্চলে চোরাচালান, ডাকাতি, চাঁদাবাজি, নদী দখল, অবৈধভাবে মাছ শিকারসহ নানান অপরাধ দীর্ঘদিন ধরে চলছে। নৌ পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে এসব অপরাধীদের আটক করলেও, প্রতিবারই জীবনবাজি রেখে অভিযান পরিচালনা করতে হয় তাদের। গত দেড় বছরে অন্তত তিন থেকে চারবার সশস্ত্র অপরাধীদের আক্রমণের শিকার হয়েছেন চালিভাঙ্গা নৌ পুলিশ সদস্যরা। আহত হয়েছেন কয়েকজন।
এমন ঘটনায় সংবাদ প্রকাশ হলেও কোনো স্থায়ী সমাধান দেখা যায়নি। বরং নাগরিক সমাজ এখন প্রশ্ন তুলছে—কেন বারবার নৌ পুলিশই হামলার শিকার হয়?
এ কি জনবল সংকট, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সরঞ্জামের অভাব, নাকি কোথাও প্রশাসনিক সমন্বয়ের ঘাটতি? কেউ কেউ বলছেন, মাঝে মাঝে এসব অভিযান যেন “নাটকীয়তা” তৈরি করে দায় এড়ানোর চেষ্টা এমন অভিযোগও উঠেছে স্থানীয়দের মুখে।
বারবার আক্রমণের শিকার হওয়া শুধু একটি বাহিনীর দুর্বলতা নয়, বরং আত্মমর্যাদার প্রশ্নও বটে। এতে নৌ পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। অপরাধীদের মনে সাহস জোগাচ্ছে যা ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে।
স্থানীয় প্রশাসন বিগত বছর থেকেই মেঘনা নদী এলাকায় স্থায়ী কোস্টগার্ড ক্যাম্প স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি অস্থায়ী ক্যাম্প বসানোর জন্য কোস্টগার্ডের একটি টিম এলাকাটি পরিদর্শনও করেছে, কিন্তু অজানা কারণে তা কার্যকর হয়নি।
সচেতন মহলের দাবি, এখনই সময় নৌ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার। চালিভাঙ্গা ফাঁড়িকে শক্তিশালী করা, পর্যাপ্ত জনবল ও আধুনিক সরঞ্জাম দেওয়া, এবং দ্রুত স্থায়ী কোস্টগার্ড ক্যাম্প স্থাপন অপরিহার্য। নদী শুধু প্রাকৃতিক সম্পদ নয় এটি অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও নিরাপত্তার সাথে জড়িত। তাই নৌপথের নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপই হতে পারে স্থায়ী সমাধান।