২৩ জুলাই ২০২০, বিন্দুবাংলা টিভি. কম,
মোঃ আলমগীর হোসেন তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি :
প্রতি বছরই চর এলাকা বন্যায় অক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ বছরও বন্যায় চরের বিস্তীর্ণ এলাকা নিমগ্ন হয়ে আমন ধানের ক্ষতি করেছে। চর এলাকার ভূপ্রাকৃতিক অবস্থান এবং বিশ্বের জলবায়ুর পরিবর্তন, উভয়েই বন্যার মাত্রাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। বর্ষাকালে দিনপ্রতি বৃষ্টিপাতের মাত্রা বেড়ে যায় এবং বছরের অন্য সময়ে বৃষ্টিপাতের দিনের সংখ্যা কমে যাবে। যার ফলে বাংলাদেশে বর্ষাকালে বন্যার প্রকোপ বাড়তেই থাকে এবং চর এলাকা হয় তার প্রধান টার্গেট।
ভূপ্রাকৃতিক কারণেই প্রতি বছর চরে বন্যা দেখা দেয়। তবে যে এলাকায় প্রধান নদীর সঙ্গে বেশি সংখ্যক শাখা-প্রশাখা নদী যুক্ত হয়েছে সেসব এলাকায়ই বন্যার প্রকোপ বেশি হয়। প্রতি বছর বন্যা হলেও বন্যার সময়ও এর ব্যাপকতার ওপর নির্ভর করে কৃষকের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ। জলবায়ুর পরিবর্তনের ছোঁয়া বাংলাদেশের বন্যার গতি-প্রকৃতির ওপর দৃশ্যমান প্রভাব ফেলছে।
চরে প্রতি বছর বন্যা হবে এটাই স্বাভাবিক। এটা চরের কৃষকের জীবনের অংশ বিশেষ। কিন্তু বন্যার মাত্রা বেশি হলে কিংবা এর স্থায়িত্ব দীর্ঘ হলে কৃষককে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বন্যার প্রকোপ বেশি হলে কৃষকের সবচেয়ে অসুবিধা হয় গবাদিপশুর বাসস্থান নিয়ে। গোয়ালঘর ভেঙে যায়, পশুর অসুখ বিসুখ বেড়ে যায়। দুর্গম এলাকায় চরের অবস্থান হওয়ার কারণে গরু-ছাগল চুরি বা ডাকাতির মাত্রাও বেড়ে যায়। তাই অনেক সময়ই মানুষ এবং পশুকে একই ঘরে বসবাস করতে হয়। সংরক্ষণাগার না থাকায় বন্যায় ফসলের বীজ নষ্ট হয়ে যায়। বর্ষাকালের প্রধান ফসল আমন ধান বিনষ্ট হয়। তবে আমন ধানের ক্ষতির মাত্রা নির্ভর করে বন্যার স্থায়িত্ব এবং বন্যার স্থায়িত্ব যদি দুই সপ্তাহের, তাহলে আমন ধান রক্ষা করা সম্ভব হবে না।
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমি অবশ্যেই সঠিক সময়ে গম, ভুট্টা, আলু, ডালজাতীয় ফসল ইত্যাদি চাষ করার জন্য প্রস্তুত করতে হবে। অন্যদিকে বন্যার পানি সরে যাওয়ার পর গবাদিপশুর রোগবালাই বেড়ে যায়। রোগবালাইয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য বিশেষ নজর দিতে হবে।
চর এলাকায় রবি ফসলের বাম্পার ফলন না হলে কৃষকের দুর্ভোগের সীমা থাকবে না ।কৃষককে বীজসহ কৃষি উপকরণ আগাম সরবরাহ করতে হবে। চর এলাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষককে কৃষি উপকরণের ওপর যথেষ্ট পরিমাণ ভর্তুকির ব্যবস্থা করতে হবে। চরের কৃষির ওপর ভর্তুকি হলো সরকারের প্রকৃত কৃষি বিনিয়োগ। অনেক সময়ই সরকারের কৃষি বিভাগের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা দুর্গম চরে কাজ করতে আগ্রহী হয় না। ফলে নতুন প্রযুক্তি থেকে চরের কৃষক বঞ্চিত হয় বা বিলম্বে তা জানতে পারে। এর মূল কারণ হলো অত্যন্ত নাজুক যাতায়াত ব্যবস্থা। মনে রাখতে হবে যে, চরের কৃষক কৃষিকাজ করতে নিরুৎসাহিত হলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য তা হবে এক মারাত্মক হুমকি। ’। কারণ প্রায় এক মিলিয়ন চরই হলো ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের খাদ্যের আধার।
যেহেতু চরে প্রতি বছরই বন্যা দেখা দেয় এবং ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাপমাত্রা আরও বৃদ্ধির যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে সেহেতু চরের কৃষি ব্যবস্থাপনার ওপর বিশেষ কৃষি প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত।অন্যান্য এলাকার তুলনায় তাই চর এলাকায় বেশি সেচের প্রয়োজন হয়। আবার চরে বিদ্যুতের সুবিধা না থাকায় ডিজেলের মাধ্যমে সেচ পাম্প চালাতে হয়। তাছাড়া বন্যার সময় গবাদিপশুর থাকার জন্য উঁচু করে সরকারের তরফ থেকে কেন্দ্রীয় গোয়ালঘর করা যেতে পারে। গবাদিপশুর চিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা না হলে চরের কৃষক উন্নত জাতের গবাদিপশু লালন পালনের জন্য উৎসাহিত হবে না। চরে খাঁচা পদ্ধতিতে বর্ষাকালে দ্রুতবর্ধনশীল মাছের চাষ করা সম্ভব বলে মাৎস্যবিজ্ঞানীরা মনে করেন। তবে সেজন্য কৃষককে প্রশিক্ষণসহ বিশেষ প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে। চরে মাছের পোনা সহজে কৃষক পায় না। সেজন্য সম্মিলিতভাবে চরের কৃষকদের সহযোগিত করতে হবে ।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।