২১ জানুয়ারী ২০২২, বিন্দুবাংলা টিভি. কম, নাসরিন সুলতানা :
নারী শব্দের অর্থ মানবী, মনুষ্যা, রমণী, নন্দিনী, মাগী, আওরাত, জেনানা, অবলা, ভাবিনী, অন্তঃপুরবাসিনী এবং অপরাজিতা।
প্রতিটা শব্দই নারীর মধ্যে নিহিত। সাধারণত মানুষ নারী মানেই বুঝিয়ে দেয় ঘরবন্দি অন্ধকারের সৈনিক। আসলে কেউ এটা বুঝতে চান না নারী মানেই আলোর প্রদীপ। বিশ্লেষণ করতে গেলে অনেক কথাই আসে নারী নিয়ে। তবে সবচেয়ে বেশী এবং সবকিছুর আগে আমরা ঘর থেকেই আলোচনা করতে পারি।
প্রথম হচ্ছে নারী মানেই মা। একজন মা তার সন্তানের আলোর দিশারি। পথপ্রদর্শক।
প্রতিটা নারী চায় একটু কদর। যেমনঃ স্বামীর কাছে তার অস্তিত্ব কতটা এবং স্বামী সেটা কিভাবে মূল্যায়ন করেন তার উপর নির্ভর করে।
অনেক পূরুষ আছে ঘরের পুরো নেতৃত্ব তিনি নিজে দিবেন। স্ত্রী থাকবে শুধু ভোগের জন্য ও ঘরের কাজের জন্য। সন্তান সামলাবে, ঘরের কাজ করবে, স্বামী যা হুকুম করবে তা পালন করবে। তার বিনিময়ে তিনবেলা পেট পূরে খাবে। এমনটা কোন স্ত্রীর প্রতি বৈষম্য বই কোন রকম সম্মান বয়ে আনে না। নিজ সম্মান অর্জনের জন্য প্রত্যেক নারীকে নিজের পায়ের নিচের মাটি শক্ত করা একান্ত কর্তব্য।
নারী পারে নিজের কাজ দিয়ে রোজগার করে দেখিয়ে দেয়া যে আমরাও পারি, যদিও কাজটা করা অতটা সহজ নয়। কারন বেশির ভাগ স্বামী চায় না ঘরের বউ বাইরে গিয়ে কাজ করুক। এটা অনেক পুরুষ পছন্দ করেন না। স্বামীর মন মতো স্ত্রী হতে গেলে এদিকেও নজর দিতে হবে। তাই আমরা ঘরে বসে কি কি কাজ করা যায় সেটা আগে ভাবনায় নিয়ে কাজ শুরু করতে পারি।
‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’- নারী ও পুরুষকে এভাবেই দেখেছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। বর্তমানে নারীরা কোনো কাজেই পিছিয়ে নেই। তারা তাদের নিজ যোগ্যতায় এগিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। আর কয়েক দশক আগেও কর্মক্ষেত্রে নারীদের পদচারণা চোখে পড়ার মতো ছিলো না। কিন্তু এখন নারীরা ঘরে বাইরে সব পেশায় নিজেদের নিয়োজিত করছে। সৃষ্টি হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোক্তা।
আমরা ঘরে বসে যে সকল কাজ দিয়ে রোজগার করতে পারি-
১. হোম টিউশনঃ শিক্ষিত হলে ঘরে বসে ছাত্র ছাত্রী পড়ানোর কাজ করা যেতে পারে। এর মাধ্যমে মানুষ গড়ার কারিগর হওয়া যায় পাশাপাশি নিজের রোজগারও হয়।
২. সেলাই ও বুটিক হাউজঃ মেয়েরা বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় এর প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। চেষ্টা থাকলে প্রশিক্ষণ নিয়ে এটা নিয়ে কাজ করা যায়। কম শিক্ষিতরাও এই কাজে পারদর্শী। এটার মাধ্যমে বর্তমানে অনেক মেয়েরা স্বাবলম্বী হয়েছেন।
৩. বিউটি পার্লারঃ গ্রামেও এখন মেয়েরা অনেক জায়গায় পার্লার দিয়ে উপার্জন করছে। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান যেমন বিয়ে, বউভাত এর অনুষ্ঠানে বউ সাজানো থেকে শুরু করে একটা মানুষকে কিভাবে সকলের সামনে সুন্দর করে উপস্থাপন করা যায় সেই চেষ্টায় নারীরা এটা নিয়ে কাজ করে রোজগার করছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণও দিচ্ছে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মেকআপ করতে পছন্দ করেন বা যাদের নারীদের স্কিন কেয়ার এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম এই দক্ষতাকেই কাজে লাগিয়ে তারা অনেকেই বিউটি স্যালন দিচ্ছেন। নারীদের এই পেশায় দক্ষতার জুড়ি নেই।
৪. নকশিকাঁথাঃ নকশিকাঁথা আমাদের দেশের ঐতিহ্য। আমাদের মধ্যে অনেকেই সেলাইয়ের কাজ খুব পছন্দ করেন। তাদের জন্য আয় করার অন্যতম একটি মাধ্যম হলো তারা ঘরে বসেই নকশী কাঁথা সেলাই করতে পারেন এবং এগুলো বিক্রি করে রোজগার এর একটি রাস্তা উন্মোচন করতে পারেন নিজের জন্য। বেশিরভাগ মানুষ এই কাজটি করেন তাদের শখের বশে আর আপনার শখ যদি হয় আপনার রোজগারের একটি মাধ্যম তাহলে নকশিকাঁথাও এতে অনন্য এক ভূমিকা পালন করতে পারে।
এমন আরো অনেক কাজ আছে যেমনঃ পিঠা তৈরি, রান্নার প্রশিক্ষণ, রান্না করা খাবার সাপ্লাই, পেপার গ্রাফটিং, গহনা তৈরি, গৃহপালিত পশু পালন, বাগান তৈরি করা, বাড়ির আঙ্গিনায় সবজি চাষ করা, বাড়ির আশে পাশে পুকুর থাকলে চারপাশে সবজি চাষের পাশাপাশি গাছ লাগানো, মাছ চাষ করা।
একজন নারী যদি চায় সে কিছু একটা করে তার সংসারে বা স্বামীকে সহযোগিতা করবে তবে তা অবশ্যই সম্ভব। এর জন্য দরকার শুধু উদ্যোগী হওয়া, উদ্যমী হওয়া। প্রচেষ্টা কখনো বিফলে যায় না।
ভারত ও বাংলাদেশে বর্তমানে শতকরা আশি শতাংশ নারী ঘর সামলানোর পাশাপাশি কর্মস্থল সামলাচ্ছে। তাই ভয়ভীতি দূর করে আসুন আমরা উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করি।
আপনি শুধু স্বপ্ন দেখার মাধ্যমে সফল নারী উদ্যোক্তা হতে পারবেন না। সেখানে যেতে আপনাকে কিছু শুরু করতে হবে। রিসোর্সের অভাব আপনাকে থামাতে পারবে না যদি আপনি সামনে অগ্রসর হতে চান, দক্ষতা বাড়ান। অন্যদের কঠোর পরিশ্রম দেখে নিজেদের গড়ে তুলতে হয়।
সময় আপনার পাশে থাকবে। আমরা সারাদিন শুইয়ে বসে দিন কাটাতে পারি। ঘরের সামান্য কাজ করে আর কিছু না করলে হয়তো স্বামী খাওয়ার পরার ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই সেই মূল্যায়ন টা পাবেন না যদি না পায়ের নিচের মাটি শক্ত হয়। আমরা প্রথমে বড় কিছু চিন্তা না করে অন্তত নিজের খাওয়া পরার খরচটা রোজগার করা দিয়ে শুরু করতে পারি।
একজনের খরচ বাঁচাতে পারলে হয়তো স্বামীর অপচয় থেকে পরিত্রাণ পাবে। নিজের স্বাবলম্বী হওয়ার একটা সুযোগ আসবে। এমন করেই আস্তে আস্তে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথটা বেড় হবে। আমরা কাজের শুরুটাই যদি না করি তাহলে কেউ শুরু করে দিবে না।
তাই আসুন নিজে উদ্যোগী হই, তারপর উদ্যোক্তা হবো।
দেশের ও দশে সম্মানের পাশাপাশি নিজের সম্মান আনবো।à
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অবশ্যই লগইন করতে হবে।