July 3, 2025, 5:43 pm

তিতাসের বুকে একখণ্ড মুরাদনগর

মো.কবির হোসেন :

তিতাস উপজেলার মাঝখানে শতবর্ষের বসতি, নাম পুনিয়ারটন। ভৌগলিকভাবে এটি মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত হলেও চারপাশে ঘিরে রয়েছে তিতাস উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম আর দক্ষিণ দিকে গোমতী নদী। এক প্রকার ছিটমহলের মতো অবস্থানে থাকা এ গ্রামটি আজও রয়ে গেছে উন্নয়ন বঞ্চিত— নেই রাস্তা, নেই শিক্ষা, নেই চিকিৎসা, নেই কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান।স্থানীয় ৭০টি পরিবার দীর্ঘদিন ধরেই অবহেলিত জীবনযাপন করছে। নেই একটি সরকারি স্কুলও, ফলে এখানকার শিশুদের বড় একটি অংশ শিক্ষা থেকে ছিটকে পড়ছে। যারা সামর্থ্যবান, তারা কষ্ট করে কয়েক কিলোমিটার দূরের স্কুলে যায়, বাকিরা থেকে যায় শিক্ষার আলো থেকে বহু দূরে।সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, গ্রামটি যেন উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে বহু দূরের এক দ্বীপ। গ্রামে প্রবেশের একমাত্র রাস্তাটি গোমতী নদীর বেড়িবাঁধ হয়ে, সেটিও ভাঙাচোরা ও কাঁচা। বৃষ্টি হলে চলাচল হয়ে পড়ে দুর্বিষহ। গ্রামের ভেতরে যেটুকু রাস্তা রয়েছে, তাও স্থানীয়দের নিজস্ব অর্থে নির্মিত। পাকা রাস্তা পেতে হলে পেরোতে হয় প্রায় দুই কিলোমিটার কাঁচা ও ইট বিছানো পথ।চিকিৎসা ক্ষেত্রেও দুর্ভোগের শেষ নেই। এই গ্রামে নেই কোনো ওষুধের দোকান কিংবা প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্র। সামান্য অসুখেও ১২-১৫ কিলোমিটার দূরে মুরাদনগর সদর হাসপাতাল বা তিতাস উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।এ গ্রামের বাসিন্দা শামসুল হক, খলিল, ডালিম ও কলেজছাত্র রুবেল বলেন, “আমাদের গ্রাম প্রায় ১০০ বছরের পুরনো। কিন্তু তিন পাশে তিতাস উপজেলা হওয়ায় আমাদের যাতায়াত, বাজার, চিকিৎসা—সবই তিতাসকেন্দ্রিক। অথচ আমরা মুরাদনগরের অধীনে, তাই তিতাস থেকেও কোনো সুবিধা পাই না। একে তো ‘ছিটমহলের মতো’ অবস্থান, তার উপর সরকারের দৃষ্টি আমাদের দিকে নেই।”গ্রামের একমাত্র মসজিদটিও নির্মিত হয়েছে গ্রামবাসীর চাঁদায়। গ্রামে না আছে বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ, না আছে কোনো সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি।স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল হক বলেন, “পুনিয়ারটনের সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। স্কুল এবং রাস্তার উন্নয়নের ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত কিছু একটা করা হবে বলে আমরা আশাবাদী।”সার্বিকভাবে দেখা যাচ্ছে, পুনিয়ারটন নামক এই গ্রামটি দেশের স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও মৌলিক নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ গ্রাম যেন উন্নয়নের মানচিত্রে এক ফাঁকা জায়গা—যেখানে এখনো পৌঁছায়নি আধুনিক রাষ্ট্রের হাত।প্রশ্ন থেকে যায়, উন্নয়নের মূল স্রোতধারার বাইরে পড়ে থাকা এই মানুষগুলোর দিকেও কবে নজর দেবে কর্তৃপক্ষ? স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেন তারা বঞ্চিত থাকবে শিক্ষা, চিকিৎসা ও চলাচলের ন্যূনতম অধিকার থেকে?

 


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা