বাংলাদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা আজ এক গভীর সংকটের নাম। গণমাধ্যমকে বলা হয় রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, কিন্তু বাস্তবে এই স্তম্ভটি আজ রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, গোয়েন্দা সংস্থার নিয়ন্ত্রণ ও কর্পোরেট স্বার্থের শৃঙ্খলে বন্দি। জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ সম্প্রতি তার ফেসবুক পেজে এ বাস্তবতাই তুলে ধরেছেন।
অর্থনৈতিক সংকট
সাংবাদিকতার প্রথম শর্ত হলো আর্থিক নিরাপত্তা। কিন্তু ঢাকায় অনেক সাংবাদিক মাসে মাত্র ৮–১০ হাজার টাকায় কাজ করেন। মফস্বলে অনেকে কোনো বেতনই পান না, বরং উল্টো পরিচয়পত্র পেতে টাকা দিতে হয়। ২০১৩ সালের অষ্টম ওয়েজবোর্ড এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে বেতন বকেয়া, চাকরির অনিশ্চয়তা আর মালিকের খেয়ালখুশি, এসবই সাংবাদিক জীবনের বাস্তবতা। অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল সাংবাদিক সত্য বলার সাহস ধরে রাখতে পারেন না।
রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা হস্তক্ষেপ
অর্থনৈতিক দীনতার চেয়ে বড় বাধা হলো রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সংস্থার হস্তক্ষেপ। বিশেষ করে ডিজিএফআই-এর প্রভাব এখন প্রকাশ্য গোপন। কোন সংবাদ প্রচার হবে আর কোনটা হবে না, তার নির্দেশ আসে সরাসরি। অমান্য করলে বিজ্ঞাপন বন্ধ, মালিকের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে বাধা, আর সাংবাদিকের ওপর হয়রানি। এভাবে সংবাদমাধ্যম জনগণের মুখপত্র হয়ে উঠতে পারে না, বরং ক্ষমতার হাতিয়ার হয়ে যায়।
কর্পোরেট নেক্সাস
বাংলাদেশের বড় কর্পোরেট গোষ্ঠীগুলো আজ সংবাদমাধ্যমকে ব্যবসায়িক ও রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষার যন্ত্রে পরিণত করেছে। হাসনাত আব্দুল্লাহ বিশেষ করে বসুন্ধরা গ্রুপের ‘মিডিয়া সন্ত্রাস’-এর কথা উল্লেখ করেছেন। কর্পোরেট চাপ সাংবাদিকদের স্বাধীন কণ্ঠরোধ করছে, সংবাদকে পরিণত করছে প্রচারণায়।
সমাধান ও পথ
এই দুষ্টচক্র ভাঙতে হলে,
সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করতে হবে।
ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন এবং চাকরির নিরাপত্তা আইনি সুরক্ষায় আনতে হবে।
অনলাইন ও টেলিভিশন সাংবাদিকতার জন্য স্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
একটি স্বাধীন গণমাধ্যম কমিশন গঠন করতে হবে, যা রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা হস্তক্ষেপ থেকে সাংবাদিকতাকে সুরক্ষা দেবে।
সম্পাদনা : বিপ্লব সিকদার।