বিপ্লব সিকদার।।
একজন সাংবাদিকের হাতে যখন কলম, তখন সেটি শুধু সংবাদ লেখার হাতিয়ার নয়—মানুষের বিবেক জাগানোর অস্ত্রও বটে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, দেশের গ্রামীণ সংবাদকর্মীরা সেই কলম দিয়ে কী লিখবেন, যদি প্রতিষ্ঠান তাদের কলম চালানোরই সুযোগ না দেয়?
আজকের মিডিয়া কর্পোরেট ভাবনায় পরিচালিত। প্রচারের আলো শহর ও রাজধানীমুখী, অথচ দেশের অধিকাংশ মানুষ বাস করেন গ্রামে। হাজারো মফস্বল সাংবাদিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে খবর সংগ্রহ করেন, কিন্তু তারা প্রতিষ্ঠানিক সুযোগ-সুবিধা থেকে প্রায় পুরোপুরি বঞ্চিত।
না আছে নির্ধারিত বেতন, না উৎসবভাতা, না আছে পেশাগত সুরক্ষা।
আধুনিক সাংবাদিকতার নামে আজকাল সনদের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়া হয়। অথচ মাঠের সাংবাদিকতা অভিজ্ঞতা ও সৃজনশীলতায় গড়ে ওঠে। একজন মফস্বল সাংবাদিক, যার হয়তো কোনো সার্টিফিকেট নেই, তিনিই স্থানীয় দুর্নীতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কিংবা মানবিক সংকটের সংবাদ প্রথম তুলে আনেন।
দুঃখজনক হলেও সত্য, ‘মফস্বল সাংবাদিক’ শব্দটি এখন অনেক জায়গায় উপহাসের প্রতিশব্দে পরিণত হয়েছে। অথচ গ্রামের উন্নয়ন ছাড়া কোনো জাতি উন্নত হতে পারে না। আর গ্রামের সমস্যা, সম্ভাবনা ও মানুষের কণ্ঠস্বর যদি মিডিয়ায় না আসে, তাহলে উন্নয়নের নীতি কেবল কাগজে থেকে যাবে।আমরা যারা গণমাধ্যমের সঙ্গে যুক্ত, আমাদের দায়িত্ব শুধু শহরের ভেতর সীমাবদ্ধ থাকা নয়। দরকার সমান গুরুত্বে গ্রামীণ সাংবাদিকদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
কারণ—
> “তথ্য যদি কেন্দ্রীভূত হয়, তবে গণতন্ত্রও একচেটিয়া হয়ে পড়ে।”এখন সময়—মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলের, তাদের কাজকে সম্মান দেওয়ার, এবং একটি ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক গণমাধ্যম ব্যবস্থার ভিত্তি গড়ে তোলার।
লেখক, ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, মাসিক বনফুল, বিন্দুবাংলা টিভি