August 23, 2025, 4:56 pm
সর্বশেষ:
স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে সবচেয়ে বড় বাধা মহাসড়কে অপরিকল্পিত ইউ-টার্ন: দুর্ঘটনার বড় কারণ জনগণ নির্বাচনমুখী হলে কোনো ষড়যন্ত্র কাজে আসবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা সরকার হুকুমমতো কাজ করাতে চাইলে চেয়ারে থাকব না : সিইসি কুমিল্লার আসন পুনর্বিন্যাসের খসড়া গ্যাজেট নিয়ে গণশুনানি: উত্তপ্ত রাজনৈতিক ময়দান মাওয়া পদ্মার পারে যুবদল–ছাত্রদল নেতৃবৃন্দের ইলিশ ভোজ স্থানীয় স্বঘোষিত ন্যায়পাল ও সমাজে বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতার অভাব মেঘনা উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত সাত-আটজন পালালেও ধরা পড়লো এক চাঁদাবাজ তৃণমূলের নেতৃত্বে স্থবিরতা: গণতন্ত্র ও নতুন নেতৃত্ব তৈরির সংকট

মেঘনায় পতিত সরকারের পরেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় সামাজিক বিপর্যয় বেড়েই চলছে

বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন :

কুমিল্লার মেঘনা উপজেলা, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাব সবসময়ই ছিল দৃশ্যমান, সেখানে বর্তমান সময়ের অস্থিরতা যেন আরেক ধ্বংসের মুখোমুখি করেছে গোটা জনপদকে। এক সময়ের রাজনৈতিক ক্ষমতাধরদের পতনের পর সাধারণ মানুষ আশাবাদী ছিল—হয়তো এবার শান্তি ফিরবে, হয়তো মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, পতনের শূন্যস্থানে গড়ে উঠেছে নতুন নতুন গোষ্ঠীকেন্দ্রিক সংঘাত, যা সামাজিক জীবনের প্রতিটি স্তরে বিপর্যয় ডেকে এনেছে।

শাসক গেলেও শোষণ যায়নি

সরকার পতনের পর পরই মেঘনায় দেখা দিয়েছে এক ধরনের নেতৃত্বহীনতা। ক্ষমতার কেন্দ্র হারিয়ে যাওয়া রাজনৈতিক শক্তিগুলো এখন নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই দিশেহারা হলেও অন্তরালে রয়েছে পুশইন সংস্কৃতি অবলম্বন করে অন্যদলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে একদিকে পূর্বের অবকাঠামো ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারে মরিয়া, অন্যদিকে নতুন উদীয়মান গোষ্ঠীগুলো পুরনো নেতাদের জায়গা দখলে উঠেপড়ে লেগেছে। এই দ্বন্দ্বে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সংঘাতময় রাজনীতি, জর্জরিত প্রশাসন

বর্তমানে মেঘনার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় প্রশাসনের কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। রাজনৈতিক প্রভাবের বলি হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষতা। বিরোধী গোষ্ঠীর লোকজনকে গ্রেপ্তার, মামলার ভয় দেখানো, অথবা জনপ্রশাসনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা—এসব চলছে নানান উপায়ে। ফলে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক, অনাস্থা এবং ভয়ের সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।

মাদক ও চোরাচালান 

মেঘনায় অবৈধ মাদক ও চোরাচালানের বড় রুট হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। মেঘনার প্রতিটি ঘরে ঘরে মাদকের ভয়াল থাবা। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় চলছে হরদম মাদক ব্যবসা। প্রশাসনের রুটিন অভিযান ছাড়া কোন অভিযান পরিচালনা হয়না। মাদক সিন্ডিকেট অনেক শক্তিশালী। তাদের রয়েছে সকল ধরনের সক্ষমতা। ভয়ে মানুষ সত্য বলা ভুলে গেছে বরং সত্যকে আড়াল করতে ক্ষমতাসীনদের  ভয়ে সাধারণ মানুষ মিথ্যা বলে স্বাচ্ছন্দ্যে।

গণমাধ্যমের কন্ঠরোধ 

সত্য সাংবাদিকতা বন্ধ করতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ধামকি, জনরোষের কবলে ফেলার একাধিক বার চেষ্টা করা হয়েছে। যা প্রশাসন অবগত। প্রায় কোনঠাসা করে দেওয়া হয়েছে সাংবাদিক ও সাংবাদিকতা।

শিক্ষাঙ্গনেও অস্থিরতার ছোঁয়া

স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠীর ছায়া-রাজনীতি শিক্ষাঙ্গনে বিভাজন তৈরি করছে। শিক্ষার পরিবেশ বিঘ্নিত হওয়ায় অভিভাবকরা সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উৎকণ্ঠায়।

অর্থনৈতিক বিপর্যয়

স্থানীয় ব্যবসা-বাণিজ্যেও এর নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়া ব্যবসা পরিচালনা করা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেকে চাঁদাবাজি, দখল ও হুমকির মুখে ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। কৃষিপণ্য বিক্রি থেকে শুরু করে স্থানীয় হাটবাজার—সবকিছুতেই এখন ‘কে কার লোক’ সেই পরিচয় মুখ্য হয়ে উঠেছে।

নারীর নিরাপত্তা ও সামাজিক স্থিতি

রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় নারীর প্রতি সহিংসতা, হেনস্তা ও হয়রানির অভিযোগ বেড়েই চলেছে। অনেকক্ষেত্রে বিচারপ্রার্থী নারীরা থানায় গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন রাজনৈতিক পরিচয়ের কারণে। ফলে সমাজে এক ধরনের মৌন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।

মেঘনায় সরকার পতনের পর যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে, তা রাজনীতির নামে বিভক্তি, প্রতিশোধ এবং সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের মাধ্যমে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। সময় এসেছে স্থানীয় নেতৃত্ব, নাগরিক সমাজ ও তরুণদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই অস্থিরতা মোকাবিলা করার। নয়তো মেঘনা নামক জনপদের এই সামাজিক বিপর্যয় আরও গভীর, আরও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে উঠবে।


আপনার মতামত লিখুন :

মন্তব্য বন্ধ আছে।


ফেসবুকে আমরা